আদিল হোসেন তপু ॥
ভোলার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জুন সামনে রেখে ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কারে নেমেছে। ঠিকাদার তাড়াহুড়া করে নি¤œমানের পাথর-বিটুমিন ব্যবহার করে বৃষ্টির মধ্যেই সংস্কারকাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের অভিযোগ, শ্রমিকেরা একদিকে কাজ করছেন, পরক্ষণে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার পরে পিচ উঠে যাচ্ছে। তাঁদের মতে, পাথর ও বিটুমিনের সংমিশ্রণ (সিলকোট) ১২ এমএম পুরু ধরা থাকলেও ৩ এমএমএর বেশি সিলকোট দেওয়া হচ্ছে না। তবে ঠিকাদার আক্তার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সওজ বিভাগের প্রকৌশলীদের চাহিদা মতোই কাজ করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ভোলার সদর উপজেলার ঘুইংগারহাট বিলের কাছে সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের গর্ত ভরাট করে পাথর-বিটুমিনের মিশ্রণ ঢালা হচ্ছে। কিন্তু এ সংস্কারকাজ পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে কোনো প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন না। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যেই গর্ত ভরাট করা হয়। কিন্তু গাড়ি আসা-যাওয়া করায় কিছু পাথরের কণা উঠে যায়। তা ছাড়া মহাসড়কের এক পাশ খুব ঢালু। সংস্কারকাজের পরও ঢালু থেকেই যাচ্ছে। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যে ঢেউ রয়েছে, তাও ঠিক করা হয়নি। সিলকোটের গভীরতা মেপে দেখা যায়, ২ এমএম থেকে ৬ এমএম। এত কম দিচ্ছেন কেন জানতে চাইলে মহসিন নামের একজন মিস্ত্রি বলেন, ‘আমগোরে যা দিত কইছে, আমরা হেইরুম করতে আছি।’
রাস্তার পাশে বিটুমিন (পিচ) গলাচ্ছিলেন মো. ফারুক মিস্ত্রি। তিনি বলেন, এটা ইরানি বিটুমিন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার বলেন, ইরানি বিটুমিন খুবই নি¤œমানের। দাম কম। বেশি কাজ হয়, কিন্তু এর স্থায়িত্ব কম।
কার্যসহকারী মো. কাওসার আহমেদ বলেন, মহাসড়কটি সংস্কারে ১২ এমএম পুরু সিলকোট দেওয়ার কথা। কিন্তু কোথাও ১২ এমএম দেওয়া হয়নি। সিলকোট গড়ে ৭-৮ এমএম পুরু হবে। এখানে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী কোথায়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আসেননি।
পরে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার তাঁর ভগ্নিপতি মারা গেছেন। তাই তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, ২০ মে মেসার্স এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আক্তার হোসেনকে এ মহাসড়ক সংস্কারের কার্যাদেশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। বিলম্বে কাজ ধরে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছেন। ৩ হাজার ১০০ মিটার মহাসড়ক সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গড়ে ১২ এমএম পুরু সিলকোট বুঝে নিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, দেশে প্রবেশ করা সব বিটুমিনেই কার্য সম্পাদনের অনুমতি আছে। তাঁরা শুধু মান নির্ণয় করেন।
সওজ বিভাগের ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মহাসড়ক সংস্কার কাজে ফিনিশিং আনতে প্রয়োজনে পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণের স্তর উঠিয়ে নতুন করে কাজ করতে হবে। এখানে গর্ত ভরাট ও সিলকোটের কাজ করার কথা। নি¤œমানের কাজের বিষয়টি খতিয়ে দেখব, কী করা যায়।’
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:১৪ ৭৯৭ বার পঠিত