শনিবার, ১১ মে ২০২৪

শেষ বয়সে ভিক্ষা করেন রেফা বিবি, সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াল জেলা প্রশাসন

প্রচ্ছদ » জেলা » শেষ বয়সে ভিক্ষা করেন রেফা বিবি, সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াল জেলা প্রশাসন
শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪



---

ছোটন সাহা ॥

স্বামী-সন্তান না থাকায় চরম কষ্ট আর আর্থিক সংকটে অসহায় জীবন কাটাচ্ছিলেন রেফা বিবি (৮০) নামের এক অসহায় দুস্থ্য নারী। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে শেষ বয়সে এসেও তাকে ধরতে হয়েছে ভিক্ষার থালা। ভোলা সদরের এমনি এক নারীকে এবার তুলে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার, খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ। যা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অসহায় ওই নারী। অবহেলিত নারীকে ভোলার জেলা প্রশাসনের এমন মানবিক সহায়তা সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

জানা গেছে, এক সময় আবাদি জমি আর মাথা গোজার ঠাই থাকলেও এখন কিছুই নেই রেফা বিবির।

১৫ বছর আগে বাড়ি ছিলো সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের বঙ্গের চর এলাকায়। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়ে বসবাস শুরু করলেও উপার্জন করার মত কেউ নেই তার। স্বামী দিন মজুর মফিজুল তালুকদার ৪০ বছর আগে মারা যান।

সন্তান কেউ না থাকায় ভিক্ষা করেই জীবিকার চলছিলো তার। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা করে যা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই নিজের খাবার জুটতো।

ভোলা সদরের দক্ষিন চরপাতা গ্রামের বৃদ্ধ রেফা বিবির জীবনের গল্পটা এতোটাই নির্মম। অসহায় নারীর এমন করুন গল্প শুনে এবার তার পাশে দাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। তাকে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার, নগদ অর্থ ও খদ্য।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শুক্রবার (২২ মার্চ) সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিন চরপাতা গ্রামে ছুটে যান ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীলসহ জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তার হাতে তুলে দেন চাল, ডাল, তেল, পেয়াজ, চিনি, আলুর প্যাকেট, ২টি কম্বল ও নগদ ৫ হাজার টাকা। যা পেয়ে খুশি অসহায় রেফা বিবি।

---

রেফা বিবি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এ পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে তারাও অভাবের তাড়নায় ঢাকা চলে গেছে। ভাঙা ঘরে একা থাকি। জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে যা দিয়েছেন তা পেয়ে আমি ভীষন খুশি। এখন আর কস্ট করতে হবে না।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ বছর আগে স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন রেফা বিবি। তার কোন সন্তান নেই। নিজের এমন অসহায়ত্ব দুর করতে একটি কন্যা সন্তান লালন-পালন করেন। ভিক্ষা করে কয়েক বছর আগে সেই মেয়েকে বিয়ে দেন।

কিন্তু রিকসা চালক মেয়ে জামাইয়ের অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে উপার্জিত যে সম্বল ছিলো তার সব হারিয়েছেন। এখন মেয়ে জামাইয়ের ভাঙা ঝুটড়ি ঘরে একা থাকেন। ৮-১০ বছর ধরে কষ্টে দিন যাপন করে আসছেন তিনি। জীবকা ননির্বাহের জন্য করেন ভিক্ষা।

এমন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনের সহায়তা অনেকটা ঘুরে দাড়াতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসি।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল ও তোফাজ্জল হেসেন বলেন, বৃদ্ধ মহিলাটি খুবই অবসহায়। ভিক্ষা করে দিনযাপন করছেন।

স্থানীয় ইউটি সদস্য ফকরুল ইসলাম বলেন, এমন দুস্থ্য পরিবারের পেশে দাড়ানো জন্য জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। এটি একটি মহৎ কাজ।

এদিকে অসহায় দুস্থ্যদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে অসহায় রেফা বেগমের পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন। এমনি কথা জানান নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল। তিনি বলেন, যে কোন অসহায় ও দুস্থ্য মানুষের পাশে থাককে জেলা প্রশাসন।

শুধু রেফা বেগম নয়, তার মত দ্বীপজেলার অনেক পরিবারই পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও খাদ্য সহায়তা। যা সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০:৪১:৪৭   ১৮৬ বার পঠিত