পরানগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের খামখেয়ালীপনায় বোরো আবাদ বন্ধ ॥ দুচিন্তায় দেড় শতাধিক কৃষক

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » পরানগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের খামখেয়ালীপনায় বোরো আবাদ বন্ধ ॥ দুচিন্তায় দেড় শতাধিক কৃষক
বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪



সেচের অভাবে বোরো আবাদ বন্ধ, বিদ্যুতের দাবীতে কৃষকদের মানববন্ধন

এম শাহরিয়ার জিলন ॥

বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বোরো ক্ষেতে পানি দিতে পারছে না ইলিশার দেড় শতাধিক কৃষক। যার ফলে ১শ’ একর জমির বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। বোরো আবাদ করতে না পেরে চরম হতাশা ও দুচিন্তায় কৃষকরা। সড়ক ও জনপদ বিভাগ ব্রীজ নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুতের পোল সরিয়ে নেয়। ব্রীজ নির্মিত হওয়ার পর সেই পোল পুনরায় নির্মাণ করে কৃষকদের সংযোগ না দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোলা সদরের ২নং ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকার কৃষকরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর খামখেয়ালীপনার কারণে বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কানে নিচ্ছে না। বিদ্যুতের দাবীতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী কৃষকরা। এসময় তারা অতিদ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগে দাবী জানান।

এদিকে, এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক এবং পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের মধ্যে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করছেন এলাকাবাসী।

আঃ রহমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ও সাবেক মেম্বার আঃ রহমান হাওলাদার জানান, গত বছর ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের গুপ্তমুন্সীর কোব্বাত আলী হাওলাদার বাড়ীর দরজার ব্রীজটি সংস্কার এর উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এসময় তারা ব্রীজ সংস্কারের কাজের স্বার্থে পাশে থাকা বিদ্যুৎ এর পোল (খাম্বা)টি সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও খাম্বাটি আর নির্মান করা হয়। এতে ওই এলাকার সেচ কাজের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে বোরো (ইরি) চাষাবাদের মৌসুম শেষের দিকে। অথচ কৃষকদের সেচ প্রকল্পে পানি দিতে পারছি না বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিতভাবে সড়ক ও জনপদ বিভাগে গেলে তারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। অন্যদিকে গত ৩ মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসে ডিজিএম আশিকুর রহমানের কাছে ধর্ণা ধরে আসলেও পল্লীবিদ্যুৎ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ডিজিএম আশিকুর রহমানের খামখেয়ালীপনার কারণে বন্ধ হয়ে আছে সেচ কার্যক্রম এবং বোরো চাষাবাদ। যার কারণে কৃষকরা বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

---

ওই এলাকার কৃষক মোঃ মানিক মোল্লা জানান, অন্যান্য গ্রামে বোরো চাষাবাদ শুরু হয়ে গেছে। অথচ গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকায় এখনো শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও পানির অভাবে বোরোর বীজতলা শুকিয়ে গেছে। ধানের চারা মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ বছর তিনি ৩ একর জমি বোরো চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এতে তার লক্ষাধিক টাকা ব্যায় হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে শুরু করতে পারছে না।

শুধু মানিক মোল্লা নন এরকম দেড় শতাধিক কৃষকের অভিযোগ সময় মতো যদি তারা সেচের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে তাদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হবে এবং দেশও কয়েক হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে।

কৃষক হারুন, মোসলেউদ্দিন মিজি বলেন, বোরোর চাষাবাদ করার জন্য তারা ধারদেনা করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যখন মাঠ প্রস্তুত করলেন ঠিক তখন বিদ্যুতের অভাবে সবকিছুই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যদি চাষাবাদ করতে না পারেন তাহলে একদিকে যেমন তারা খরচের টাকা তুলতে পারবেন না। অন্যদিকে ধান না পেলে ভবিষ্যতেও না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। কৃষকদের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা। কবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে আর সেচ দিয়ে বোরোর চাষাবাদ করতে পারবেন, যদি না পারেন তাহলে সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটাবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকদের।

কৃষক সিরাজ উদ্দিন মিজি, মজির উদ্দিন মল্লিক, নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, সরকার যেখানে এক ইঞ্চি জমিও যেখানে খালি রাখা যাবে না বলে জানায় সেখানে এই বিলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমানের খামখেয়ালীর কারণে শতাধিক একর জমি যদি চাষাবাদ থেকে বাদ যায় তাহলে তার দায় দায়িত্ব পল্লীবিদ্যুতকেই বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে পল্লীবিদ্যু সমিতি পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আশিকুর রহমানের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কোন সদ উত্তর দেননি। বরং অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০:৫০:৩১   ৩৯৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


লালমোহনে ১২৬ কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
ভোলার গ্যাস উৎপাদন: কূপ খননে আরও চড়া দাম চায় গাজপ্রম
ভোলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
লালমোহনে তীব্র গরমে মুরগির খামারিদের বাড়ছে দুশ্চিন্তা
‘নকশী কাঁথা’ সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন ভোলার আমেনা খানম
ভোলায় ওমানিয়ান টুপি সেলাই প্রশিক্ষনের সার্টিফিকেট বিতরন
ভোলায় প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী ও উদ্যোক্তাদের মেলা অনুষ্ঠিত



আর্কাইভ