বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চুরির মিথ্যা অপবাদে আত্মহত্যা: ১১ জনকে আসামি করে মামলা

প্রচ্ছদ » অপরাধ » চুরির মিথ্যা অপবাদে আত্মহত্যা: ১১ জনকে আসামি করে মামলা
শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২



স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলার লালমোহন উপজেলায় চুরির মিথ্যা অপবাদে গৃহবধূ আত্মহত্যার ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচণা মামলা দায়ের করেছেন ওই গৃহবধূর বাবা আবুল কাশেম। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে লালমোহন থানায় রতœার চাচা শশুর হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ১১জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করা হয়। যাঁর মামলা নম্বর-৫/২২। লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেননি।

---

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস রতœাকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দেয় শশুড়বাড়ির লোকজন। যাঁর ফলে রতœা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। তিনি ২ সন্তানের জননী ছিলেন।
“আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমি ও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু এই সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিল না। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করেনা। বাবা মা স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোন পরপুরুষের সাথেও কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করেও চোর সবার মুখে মুখে।” গৃহবধূ রতœা লালমোহন উপজেলা চরভূতা ইউনিয়ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. লিটনের স্ত্রী ছিলেন।
রতœার বাবা লালমোহন বাজার ব্যবসায়ি এবং পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্ধা আবুল কাশেম জানান, তাঁর মেয়ে স্বামী বাড়িতে সুখেই ছিল। জামাই লিটন তার আপন ভাগ্নে হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে রতœার চাচা শশুর স্থানীয় মো. হাফিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে ভারত থেকে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ভারতে তিনি বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে সন্তোষ দে নামে বসবাস করেন। তিনি নিজেদের সাথে থাকা স্বর্ণালংকার রতœার কাছে জমা রাখেন। ওই ঘর থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এই চুরির অপবাদ চাচা শশুর রতœার উপর দেন।
রতœার বাবা আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে অত্যাচার করে তার চাচা শশুর ও বাড়ির অন্যান্য স্বজনরা। অপমান, লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে রতœা ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে।
মৃত্যুর আগে রতœা তার কষ্টের কথাগুলো লিখে গেছেন ডায়েরির নোটে। রতœা লিখেন, “বাবা আমার অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কেউরে ছাড় দিবানা, ওরা সবাই মিথ্যেবাদী। আমার চাচা শশুর ওরা সবাই নাটের গুরু। ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যে অপবাধ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কি হতে পারে!! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলছি আমি চুরি করি নাই। এখন তোরা খুশি, সবাই খুশিই থাক। আমি চলে গেলাম কেউ আর তোদের সাথে সত্যের প্রতিবাদ করবে না। আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিল সমাজকে, এই সমাজে ভাল মানুষের মূল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়ে দুজনকে দেখিয়েন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় তা বলে বুঝাতে পারবো না। মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যাঁর মা নাই সে বুঝে, বাবা মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই।”
এভাবে ডায়েরির ১৩টি পাতায় আরো অনেক লেখা লিখে গেছেন রতœা। স্বামীর উদ্দেশে লিখেছেন, বাবা-মায়ের উদ্দেশে লিখেছেন, দুই মেয়ের উদ্দেশে লিখেছেন। নিজের দাফন কোথায় করবে সেটাও লিখেছেন। ডায়েরিটি রতœার স্বামী লিটনের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে ডায়েরিতে ৮টি পাতা ছেঁড়া পাওয়া গেছে।
স্বামী লিটনও তার স্ত্রীকে যারা অপবাদ দিয়ে মেরেছে সেই চাচাদের বিচার চান। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার চাচারা অনেক গালিগালাজ করেছে। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০:২৩:৪১   ২৫৩ বার পঠিত