লালমোহনে ৩০০ বছরের পুরনো রহস্যঘেরা বটগাছ

প্রচ্ছদ » জেলা » লালমোহনে ৩০০ বছরের পুরনো রহস্যঘেরা বটগাছ
শুক্রবার, ১৮ মার্চ ২০২২



ছোটন সাহা ॥
ভোলার লালমোহন উপজেলায় এবার সন্ধান মিলেছে প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন একটি বটগাছের। গাছটিকে ঘিরে মানুষের যেন কৌতূহলের অন্ত নেই। রহস্যঘেরা বটগাছটিকে কখন কীভাবে রোপন করা হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারো। তবে, গাছটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য রূপকথার গল্প। রয়েছে অলৌকিক ঘটনাও! কয়েক দশক ধরে গাছটিকে দেবী রূপে পূজা করে আসছেন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের সনাতন ধর্মালম্বীরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, আমবশ্যা বা পূর্ণিমার রাতে আলোকিত হয়ে উঠে গাছটি। মধ্যরাতে শোনা যায় নূপুরের আওয়াজ। গাছের ডালের ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। গাছের সঙ্গেই লাগোয় বিশাল দিঘি। সেই দিঘি নিয়েও রয়েছে রূপকথার গল্প। এর মধ্যে রয়েছে পুকুরে স্বর্ণের নৌকা এবং থালা-বাসন ভেসে আসার গল্প।
গাছটিকে ঘিরে গা শিউরে উঠার মতো অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে শুনে আসছে ওই বাড়ির লোকজন। এজন্য গাছটি যেমনি তাদের কাছে ভয়ে মনে হয় ঠিক তেমনি রহস্যঘেরাও। কেউ কেউ বলছে লালমোহন সৃষ্টি হওয়ার আগে থেকেই গাছটি দেখা গেছে।

---

বিভিন্ন সময় প্রকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গেলেও গাছটি ছিল অক্ষত। তবে, এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছটির সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে, নতুন প্রজন্মের কাছে গাছটি এখন ইতিহাস বা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবেই হয়ে রয়েছে।
ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের গজারিয়া বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মী শীল বাড়ি বা বটতলা কালীবাড়ি নামক এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এ বটগাছটি। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ওই বাড়ির অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানালেন, বটগাছের সঙ্গে যুক্ত আছে আরেকটি বৃক্ষ। দুটি গাছ যেন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। গাছের পাশেই রয়েছে মন্দির। সেখানে প্রতিবছর কালীমাতা, শীতলা ও বুড়ি মায়ের পূজা হয়।
বাড়িটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে প্রাচীন এ বটগাছটি। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন গাছটি দেখতে।
১০ বছর আগেও অচেনা এক বেদে সর্দার এসেছিলেন সাপ ধরতে। তিনি বীন বাজিয়ে বটগাছ থেকে সাপ বের করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাপ ধরতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।
গভীর রাতে বটগাছটি সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে অনেকেই ভয় পায়। তবে, গাছে দ্বারা কারো কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ৩০০ বছরের পুরনো এই বটগাছটির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার দাবিও জানিয়েছের তারা।
ওই বাড়ির ৮০ বছরের বৃদ্ধ সন্তোষ কুমার দাস বলেন, গাছটি অনেক বছরের পুরনো। আমার পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে গাছটির গল্প শুনে বড় হয়েছি। গাছটি কে রোপন করেছিল তা কেউ জানে না। গাছটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক রূপকথার গল্প।
কণিকা বালা দে নামে এক গৃহবধূ বলেন, এখনও গভীর রাতে শোনা যায় কারো হাঁটার ও নূপুরের শব্দ। মনে হয়, কেউ এই পথ দিয়ে হেঁটে যায়।
স্থানীয় পাপ্পু চন্দ্র দে বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে আমি গাছটিকে যেমনি দেখে আসছি। এখনও যেন তেমনি রয়েছে কোন পরিবর্তন হয়নি। ছোটবেলা থেকে গাছটি দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি।
মন্দির কমিটির সম্পাদক হরিপদ দে বলেন, বটগাছটি একটি ইতিহাস হয়ে রয়েছে। দিঘিটিও যেন আরেক ইতিহাস। আগে এ দিঘিতে স্বর্ণের নৌকা ভেসে আসতো। থালা-বাসন ভেসে আসতো। কেউ একজন একটি থালা নিজের কাছে রেখে দেয়। এরপর থেকে আর কখনো থালা-বাসন আসেনি। এ গল্প অনেক বছর আগের। এ গাছটি আমাদের বাড়ির ঐতিহ্যবহন করে আসছে।
সাবেক ইউপি সদস্য মহাদেব চন্দ্র বেপারি বলেন, লালমোহনে আগে থেকেই এ গাছটি দেখা গেছে বলে শুনেছি। গাছটি অনেক বছরের পুরনো। প্রায় ৩০০ বছর আগে হবে। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ধরে রাখতে গাছটি সংরক্ষণ করা দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১:৪৬:১৭   ৩৩৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছের সংবাদ সম্মেলন
ভোলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা সভা
আশরাফ হোসেন লাভু ছিলো আ’লীগের নিবেদিত প্রাণ: তোফায়েল আহমেদ
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ॥ আহত-৩০
আমাকে মটর সাইকেল প্রতীকে আপনাদের মুল্যবান ভোটটি দিবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ইউনুছ
নদীতে মিলছে না কাংখিত ইলিশ, হতাশ জেলেরা
সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস-পলাশ এর মতবিনিময় সভা
ভোলায় তীব্র তাপদাহের পর একপশলা প্রশান্তির বৃষ্টি
ভোলা জেলা শ্রমিক লীগের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালিত
কাঁচের চুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বোরহানউদ্দিনের শ্রমিকরা



আর্কাইভ