বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোলায় বিদ্যালয়ে রাতের আধারে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা

প্রচ্ছদ » অপরাধ » ভোলায় বিদ্যালয়ে রাতের আধারে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা
মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১



---

আদিল হোসেন তপু ॥
ভোলায় রাতের আধারেও উড়ছে জাতীয় পতাকা। সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে ভোলা সদরের শিবপুর ইউনিয়নের ২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই পতাকা উত্তোলণ করে রাখা হয়েছে। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় সরজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেছেন সহকারী শিক্ষক ভুল করে জাতীয় পতাকা টানিয়ে রেখেছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, রাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ পতাকা অবমাননার সামিল। সন্ধ্যার আগে পতাকা নামিয়ে রাখতে হবে, কোন অবস্থাতেই রাতে পাতাকা টানানো যাবে না। স্থানীয়রা এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের অবহেলায় জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোলা সদরের শিবপুর ইউনিয়নের ২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাতের আধারেও উঠছে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশ সরকারের পতাকা উত্তোলণের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যদয় থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত লাল-সবুজের জাতীয় পাতাক উত্তোলণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারের এই নিয়ম না মেনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের গাফলতি-অবহেলায় জাতীয় পতাকা রাতের আধারে উড়ছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরজমিনে গিয়ে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়।
এসময় স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, আজকে রাতে আমরা এই বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখি। বিষয়টি আমাদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। এই পতাকার সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। আমরা দেশকে ভালোবেসে জীবন দিয়েছি। আজ সে দেশের পতাকার অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে জাতীয় পতাকা অবমাননার বিচার হওয়া উচিত।
২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাইনউদ্দিন বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ মা-বোনের স¤্রমের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি। এই পতাকার অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল টাইমের বাইরে পতাকা উত্তোলণটি আমি ভালো ভাবে দেখছি না। আমি শিক্ষকদেরকে বলে দিবো আগামী দিনে যাতে এই ভুল না করে।
ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক হামিদুর রহমান হাসিব বলেন, জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। এই পতাকার যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রতিটি নাগরিককের নৈতিক দায়িত্ব। দেশবিরোধী একটি চক্র সবসময় আমাদের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা অবমাননা করায় লিপ্ত রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে যারা নির্দিষ্ট সময়ে পতাকা না নামিয়ে রাতের আধারে উত্তোলন করেছে তাদেরকে দেশের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত কি না তা তদন্ত করে বের করা উচিত।
২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ থাকার কারণে স্কুল থেকে একটু আগে বের হয়ে গেছি। আমার সহকারী শিক্ষকরা ভূলবশত পতাকা নামাতে খেয়াল ছিলো না। শিক্ষকদের ভুলের কারণে পতাকাটি না নামিয়ে রাখায় আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে আর এমন ভুল হবে না বলে তিনি জানান।
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি লাল-সবুজের পতাকা। জাতীয় পতাকার অবমাননার করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। শিক্ষকরা যদি জাতীয় পতাকা সম্মান নষ্ট করে তাহলে তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম কি শিখবে। ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকার অবমাননার বিষয়টি শুনে আমি ব্যাথিত হয়েছি। এটি আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে। যদি বিরোধী কোন চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই পতাকা অবমাননা করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসা নিখিল চন্দ্র হালদার বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সূর্যদয় থেকে সূর্যস্থ পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উড়ানোর নিময় রয়েছে। রাতে আধারে ২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উড়ানোর বিষয়টি অবমাননার সামিল। জাতীয় পতাকার সম্মান অক্ষুন্ন রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ওই বিদ্যালয়ে যদি রাতের আধারে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০:১৭:০৮   ৩৯৯ বার পঠিত