বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

একজন আলোকিত মানুষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেনকে অভিনন্দন

প্রচ্ছদ » জেলা » একজন আলোকিত মানুষ মুহাম্মদ শওকাত হোসেনকে অভিনন্দন
রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১



 

॥ তানভীর রনি ॥

সুজলা সুফলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চারণভূমি এই বাংলাদেশে যুগে যুগে জন্মেছেন বহু প্রতিভাবান, মানবদরদী মানুষ। যারা তাদের মেধা দিয়ে কর্ম দিয়ে এই সমাজ ও সমাজের মানুষগুলোকে আলোকিত করেছেন। তেমনি এক আলোকিত মানুষ ভোলার গর্ব সাংবাদিক-সাহিত্যিক, শিক্ষক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। পলি মাটির দেশ ভোলার অপরূপ প্রকৃতির বিস্ময় ভোলার সুযোগ্য সন্তান জনাব মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, গবেষক শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক হিসেবে তিনি সফল মানুষ। বহুমাত্রিক জ্ঞানভান্ডারে সমৃদ্ধ একজন আলোকিত মানবতাবাদী’ ব্যক্তিত্ব। বর্ণাঢ্য কর্মপরিধি এবং বিশাল ভান্ডার সমৃদ্ধ একজন মানুষকে কোন বিশেষ বিশেষণে সীমাবদ্ধ করা অসম্ভব। তিনি একাধারে শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজ সেবক, ইসলামী চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক সর্বোপরি একজন আলোকিত মানুষ।

 

---

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বিস্ময়কর। তার স্বাক্ষরে এই ভোলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ভোলা বাণীর দরখাস্ত বরিশালের জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ফাইল করা হয়েছিলো ১৯৮০ সালে। তিনি ছিলেন এ পত্রিকার অন্যতম উদ্যোক্তা ও সহকারী সম্পাদক। আবার তিনিই ১৯৯১ সালে ভোলা থেকে দৈনিক পত্রিকার ডিক্লারেশনের জন্য ভোলার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। যে সময়ে ভোলার কোন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী কিংবা সামাজিক ব্যক্তিত্বের মাথায় ভোলা থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা আসেনি বা এটা যে সম্ভব এই বিশ্বাসও ছিল না। ঠিক তখন এই দূরদর্শী ব্যক্তি সুদূর প্রসারী চিন্তা করে ভোলা থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যথারীতি তিনি জেলা প্রশাসক ইদ্রিস মিয়া’র নিকট থেকে ডিক্লারেশন পান দৈনিক আজকের ভোলা এর। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে ১৯৯২ সালে পত্রিকা প্রকাশ করতে না পারলেও হাল ছেড়ে দেননি। প্রথমে পত্রিকার জন্য ‘স্বদেশ প্রিন্টিং প্রেস’ নামে একটি মুদ্রাণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর আবার উদ্যোগ নেন ৯৪ সালে। যথারীতি জেলা প্রশাসক মোঃ সিকান্দার আলী মন্ডল এর কাছ থেকে পুনরায় ডিক্লারেশন নিয়ে ১৯৯৪ সালের ১২ এপ্রিলে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ভোলার প্রথম দৈনিক পত্রিকা আজকের ভোলা’র প্রকাশনা শুরু করেন। যে অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে এসে যোগ দিয়ে ছিলেন তখনকার তথ্য মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং ভোলার প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহানসহ ঢাকা ও ভোলার বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। পত্রিকাটি প্রায় প্রায় তিন দশক ধরে আজও নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে ভোলার মানুষের চিন্তা চেতনায় একটি আলোকবর্তিকা হয় জ্ঞান, সভ্যতা ও সুস্থতার আলো ছড়াচ্ছে। তার হাতে সাংবাদিকতার সবক ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভোলা এবং ঢাকায় শতাধিক সাংবাদিক যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ভোলার সাংবাদিকদের লিজেন্ড হিসেবে সবাই তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে।
অন্তরে, মননে, আপাদমস্তকে তিনি একজন সমাজ সেবী। যেখানে সেবার প্রয়োজন সেখানেই তিনি আছেন। অর্থ খ্যাতি যশ কিংবা ক্ষমতার পেছনে কখনো তিনি ছুটেননি। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাওয়ারিশ লাশের দাফন ও দুষ্ট মানবতার সেবা, শীতবস্ত্র বিতরণ, প্রতিবন্ধী স্কুলের মাধ্যমে শত শত প্রতিবন্ধীদের লালন পালন এবং কর্মসংস্থানসহ নানা ধরনের সামাজিক কল্যাণ মূলক কাজ নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন। নিজের ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পেছনে না ছুটে সমাজ ও মানুষের কল্যাণের জন্য নিরন্তর ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি।জীবনভর কর্মতৎপর , নির্মোহ, সদলাপি, বিনয়ী এ মানুষটি অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অর্থ-সম্পদের পেছনে না গিয়ে জ্ঞান অর্জন ও মানব কল্যাণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও তিনি সরকারি চাকরি কিংবা অন্য কোনো পেশায় নিজেকে আবদ্ধ করেননি। বিশ্বের বেশ কটি দেশ সফর করেছেন, কিন্তু অন্য কোন দেশে চাকরি কিংবা স্থায়ীভাবে থাকার কথা কখনো চিন্তা করেননি। প্রায় পাঁচ দশক যাবত ভোলার যুব সমাজকে বিভিন্নভাবে জ্ঞান অর্জন, সততা ও সুস্থতার আলোয় আলোকিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করছেন।
বেশ ক’টি গ্রন্থ রচনা করলেও তার প্রধান কীর্তি ভোলা জেলার আপডেট ইতিহাস। একটি আধুনিক শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত জেলা হিসেবে ভোলা জেলার রয়েছে গৌরবজনক ইতিহাস ঐতিহ্য। অতীতে দু-একজন ইতিহাস লেখার প্রয়াস চালালেও গত দুই দশক যাবত ভোলার একটি আপডেট তথা পরিপূর্ণ ইতিহাস লেখার কাজে কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি সেই কাঙ্খিত কাজটি যোগ্যতার সঙ্গে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর লেখা ও সম্পাদিত ভোলা জেলার ইতিহাস গ্রন্থটি সকল মহলে, সকল মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে, প্রশংসা পেয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে যেটা তার অবিস্মরণীয় কীর্তি, অমূল্য সম্পদ হিসেবে তিনি তুলে দিয়েছেন। কবি কুসুমকুমারী দাশ বহু আগে লিখেছিলেন, “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
জনাব শওকাত সাহেব যেন সে কথারই বাস্তব প্রতিফলন। বিশাল কর্মযজ্ঞ ও সুখ্যাতির মধ্যেও তার কোন অহংকার নেই, প্রচার নেই। অতি সাধারন একজন মানুষের মতোই তিনি শুধু কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ভোলাবাসী হিসেবে আমরা তার জন্য গৌরব বোধ করি। আমরা আশা করবো আজকের প্রজন্মের উদ্যোগী ও মেধাবীরা তাকে অনুসরণ করে সমাজ সভ্যতাকে সুন্দর ও মানুষের বসবাসযোগ্য করার জন্য চেষ্টা চালাবে। তার কাংখিত আলোকিত মানুষ ও সুস্থ সমাজের বিনির্মাণে আমরা সবাই চেষ্টা করবো।
দৈনিক আজকের ভোলা এর ২৮ তম বর্ষ শুরুর এই মাহেন্দ্রক্ষণে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, প্রকাশক ও সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেনকে ভোলাবাসীর পক্ষ থেকে জানাচ্ছি অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
লেখকঃ তানভীর রনি

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৩:০২   ৭৬২ বার পঠিত