বিশেষ প্রতিনিধি ॥
চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদে ইউনানী-আয়ুর্বেদ, ভেষজ, হারবাল ও কবিরাজি দাওয়াখানার চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল। নিরীহ সহজ-সরল অসহায় মানুষের কাছ থেকে অপচিকিৎসার নামে তারা হাতিয়ে নেয় প্রচুর অর্থ। এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই।
সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো বন্ধে সরকারি কোনো সংস্থা উদ্যোগ নিচ্ছে না। কথিত হারবাল সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দূরের কথা, উল্টো অপচিকিৎসার শিকার হয়ে শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ধরনের হারবাল চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে কতিপয় ব্যক্তি ও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। এলাকার অলিগলির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রচারপত্রে এসব চিকিৎসক যৌন দুর্বলতার চিকিৎসার নামে পুরুষ ও মহিলাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা প্রথমেই হরেক রকমের বাহারি চকচকে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে লোভে ফেলার অপচেষ্টা চালায়। চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট, হাজিরহাট, বাংলাবাজার, মুন্সীরহাট, চৌমহনী বাজার, একতাবাজার, শিবারহাট, মৌলভীবাজার, জনতাবাজার, মুখারবান্দা, লেতরাবাজার, চেয়ারম্যান বাজার, কেরামতগঞ্জ, ঢালিরহাট, শেমগঞ্জ, গাছিরখাল বাজার, আঞ্জুরহাট, দাশেরহাট, কাজলবাজার, নজির মাঝির হাট, গুলিস্থান বাজার, রৌর্দ্দেরহাট, মতলবমিয়া বাজার, চৌকিদার বাজার, মাঝিরহাট, উত্তর আইচা, দক্ষিণ আইচা, ঢালচর বাজার ও কুকরী-মুকরী বাজার। এসব বাজারে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক হারবাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে চলছে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা। এদিকে কথিত হারবাল সেন্টারগুলো ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে মহৌষধের দোকান খুলে বসে আছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চিকিৎসালয়ের সংখ্যা কত এবং ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের কতগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে- এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই ওষুধ প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে। এরপরও সব রোগের চিকিৎসার গ্যারান্টি সহকারে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে, কুরুচিপূর্ণ প্রচারপত্র বিলি করে ও ক্যাবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রামীণ জনপদের একশ্রেণীর হতাশাগ্রস্ত ও দিশেহেরা সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দক্ষিণ ফ্যাশন গ্রামের আলমগীর হোসেন সরমান জানান, ‘আমি হারবাল ওষুধ খেয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। পরে ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’
চরমাদ্রাজ গ্রামের আয়শা বেগম বলেন, ‘আমি মোটা হওয়ার ওষুধ খেয়েছিলাম। পরে আমার শরীরে পানি জমে গেছে। আমি বরিশাল গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তার বলেছেন আরও পরে এলে কিডনিতে বড় ধরনের সমস্যা হতো। দীর্ঘ পাঁচ মাস ওষুধ খেয়ে ভালো হয়েছি।’ ড্রাগ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, কোনো ফার্মেসি দিতে হলে সরকারিভাবে ড্রাগ লাইসেন্স প্রয়োজন। চরফ্যাশনে কোনো হারবাল চিকিৎসালয়ের ড্রাগ লাইসেন্স নেই। কয়েকটি হারবাল ফার্মেসিকে বারবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন বসাক বলেন, হারবাল চিকিৎসার কোনো বৈধতা নেই। অনেক রোগীর জীবন শেষ করে দেয়া হয়। হারবালের ওষুধ সেবন করে ক্ষতির শিকার অনেক রোগীর চিকিৎসা আমি করেছি। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩২:৩১ ১০১৫ বার পঠিত