নদীতে জীবিকা নদীতেই মরন!

প্রচ্ছদ » জেলা » নদীতে জীবিকা নদীতেই মরন!
সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭



---
ছোটন সাহা ॥
নদীর তীরে নৌকার মধ্যেই রান্নার কাজ করছিলেন মানতা বধু নুরজাহান (২২)। চোখ-মুখে কিছুটা চিন্তা আর আতংকের ছাপ। মুখে হাসি নেই। জীবিকার টেনশন!। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠলেন, আমাদের খবর নিয়া কি করবেন? কেউ কি আমাদের খবর রাখে?।
‘নদী আমাগো জীবন, এই নদীই আমাগো সবার মরন। নদীতে মাছ ধইর‌্যা যেমন খাবার জুটে হেই নদীতেই আবার সন্তানদের মৃত্যু হয়। বহু চেষ্টা করি সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে কিন্তু কখনও কখনও পানিতে ডুবে মারা যায়, অনেক সময় লাশ খুজেও পাওয়া যায়না।
বানভাসি মানতা সম্প্রদায়ের গৃহিনী নুর জাহান সরল মনেই এ কথাগুলোই বলছিলেন। ভোলা সদরের ইলিশা ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় নুরজাহানকে। দু:সাহসি এই নারী অকপটেই তার জীবনের কষ্টের অজানা গল্প  তুলে ধরে বলেন, এক বছর আগে আমার একমাত্র সন্তান পানিতে পড়ে মারা যায়। সেই থেকে কষ্ট নিয়ে বেচে আছি, কিন্তু তবুও পানিতেই বাস করতে হবে। সতর্ক থাকি  তবুও বাচাতে পারিনি তাকে।
জীবন জীবিকার তাগিয়ে পানিতে বসবাসকারী মানতা সম্প্রদায়ের দৈনেন্দিন জীবন-জীবিকা ঠিক এমনই। নৌকার মাঝে হাসি আননন্দ খুহে পেলেও হারানো ব্যাথায় কাদেন তারা। এসব বঞ্চিত মানুষ নদীতে সারাদিন জাল বুনে মাছ শিকার করেন। ওই মাছ স্থানীয় মাছ ঘাটে বিক্রি করে খাবারের ব্যবস্থা করেন। সহায় সম্বল বলতে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। সেই নৌকায় বসবাস করতে গিয়ে কখনও কখনও তাদের হারাতে হয় ছোট ছোট শিশু সন্তানদের। স্বাভাবিক জীবন থেকে আলাদা জীবন যুদ্ধে তাদের সঙ্গি নৌকা আর জাল। ঘর সংসার বলতে নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা।
মানতা সর্দার আলমগীর বলেন, কিছুদিন আগে বাদশা  ও মিন্টুর দুটি মেয়ে নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। গত এক বছরের বহরের ১০টি মারা গিয়েছে। জীবন যুদ্ধে তাদের সন্তানদের কথা মনে করে আজো কাদেন তারা।
মানতা সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানতাদের নিজস্ব সম্পত্তি নেই। নেই নিজস্ব বসতি কিংবার ঘর-দুয়ার। নৌকাতে তাদের পরিবার বসবাস। গোসল, রান্না-বান্না, বিয়ে, সন্তান লালন পালন, মাছ শিকার চলে নৌকাতেই।
নৌকা বহর নিয়ে  এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাদের ছুটতে হয়। কখনও কখনও ঝড়ের সাথে লড়াই করতে হয় আবার কখনখও জলসদ্যুদের কবলে পড়তে হয়। জীবনের নিরাপত্তা না থাকলেও নৌকাতে চলে বসতি। প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও মাছ শিকার করতে হয় তাদের। নদীতে মাছ ধরা না পড়লে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের।
মানতা সর্দার জাহাঙ্গির বলেন, আমাদের ঘর ভীটে নেই। নদীতেই বসাবাস করি। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। শিক্ষা-চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত আমরা।
মানতা বধু কহিনুর বলেন, ছোটবেলা থেকে নৌকাতেই তিনি বেড়ে হয়েছে, পরে নৌকার বহরে তার বিয়ে হয়, সেই থেকেই নৌকাতে জীবন কাটছে তার। এখন সন্তানদের বড় করছেন। এক সময় তাদের বিয়ে দেয়া হবে নৌকাতে।
নুরজাহান বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছে রয়েছে কিন্তু ফেরার কোন উপায় নেই।  নৌকায় জড়িয়ে রয়েছে জীবন জীবিকা।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিমউদ্দিন বলেন, মানতাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় বিষয়ে আলাদা কোন কর্মসূচী নেই, তবে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিনিক কিংবা মেডিকেল টিমে এসে তারা সুবিধা নিতে পারবে। এছাড়াও তারা আসলে বা আমাদের নজরে পড়লে আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগীতা করবো। আমরা বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছি  যাতে তারা বঞ্চিত মানুষদের  সহযোগীতা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৫:০০   ৩৬৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


এমন নির্বাচন হবে যা ভোলাবাসী কখনো ভুলবে না: ভোলায় ইসি হাবিব
ভোলায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
ভোলায় মেঘনা নদী থেকে পাঙ্গাস মাছের অবৈধ পোনা শিকারের ৫টি চাই ধ্বংস
২১ তারিখ মটরসাইকেল ও উড়োজাহাজে ভোট দিবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ
তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩শ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক
ভোলায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের সাথে মতবিনিময় সভায় দোয়া চেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারেফ হোসেন
ভোলায় সাংবাদিকদের নিয়ে এলজিইডির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রচারনাকালে প্রার্থীর ওপর হামলা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর, আহত-৪
মানুষের শান্তি নষ্ট করে সন্ত্রাসী ও জলদস্যু দিয়ে ভোট নেয়া যাবেনা: চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ
ভোলায় আইডিইবি’র দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন



আর্কাইভ