বুধবার, ১ মে ২০২৪

ভোলা-বরিশাল সড়কপথ ॥ সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে সেতু

প্রচ্ছদ » জেলা » ভোলা-বরিশাল সড়কপথ ॥ সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে সেতু
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩



বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত করতে পারে একটি সেতু। ইতিমধ্যে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে শুধু সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা।
জানা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। সেতুটির নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বরিশাল থেকে ভোলা যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ। নদীপথে বরিশাল থেকে ভোলার ভেদুরিয়া যেতে লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টা এবং ¯িপড বোটে ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে। ভেদুরিয়া থেকে ভোলা সদর উপজেলায় যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে।

---

বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট থেকেও লঞ্চে ভেদুরিয়া যাওয়া যায়। এই ঘাট থেকে ভোলার ইলিশঘাট পর্যন্ত একটি ফেরি চলাচল করে। ভোলা থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নৌকা ও লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। যা এই জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানায়, ভোলার সঙ্গে কোনো সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বরিশাল জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে বরিশাল ও ভোলা জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। সেতু নির্মাণের জন্য জরিপ এবং সেতুর সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণের এই দুটি জেলার মধ্যে যাতায়াতে সময় কম লাগবে। ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সহজ হবে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভোলায় এসে তৎকালীন সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেন জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ হবে। ইতিমধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) স¤পন্ন হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে জার্মানি, জাপান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি কো¤পানির আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ২০৪১ সালের যে রূপকল্প আছে তাতে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতুর কথা উল্লেখ আছে।
সামাজিক সংগঠন ব-দ্বীপ ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী মীর মোশাররফ অমি বলেন, ‘বহুল কাংখিত ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণকাজ শুরুর স্বপ্ন দেখছিলেন ভোলাবাসী অনেক আগেই। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এখন পুনরায় সমীক্ষা যাচাইকাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হচ্ছে না। ভোলার সঙ্গে বরিশালের সংযোগ হলে ভোলাবাসী ভক্সগুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের সুবিধা পাবেন, তেমনি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। তাই আমরা দ্রুত এই প্রকল্প চালুর দাবি জানাই।’
বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদয়পুর এলাকার ব্যবসায়ী শেখ আ. রহিম নাগর মিয়া বলেন, ভোলা-বরিশাল সেতু খুবই প্রয়োজন। এটা ভোলাবাসীর প্রাণের দাবী। এই সেতুর জন্য বহু নেতাকে বহুবার বলেছি। কিন্তু এখনো ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ কেন হচ্ছে না তা  জানি না।
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ভোলা জেলার সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, ‘সরকারের যেহেতু প্রস্তাবনা আছে, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ হবে। তবে আমি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভেদুরিয়া এলাকায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় ইউরোপিয়ান কমিশনের অর্থায়নে এলজিইডির বাস্তবায়নে মুসলিম এইডের তত্ত্বাবধানে ‘কাজের বিনিময়ে অর্থ’ প্রকল্পের আওতায় ভেদুরিয়া থেকে কালাবদর রাস্তাসহ মাটির বাঁধের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।
ভোলার চরচটকিমারা হয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট কয়েকটি ব্রিজও পাকা হয়ে গেছে। তাই সরকার ইচ্ছা করলে সেখান দিয়ে ভোলার লাহার হাট তেঁতুলিয়া ও বরিশালের কালাবদর নদীতে দুটি কাটা ফেরির ব্যবস্থা করলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ভোলা থেকে বরিশাল যেতে পারবে।
ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন বলেন, এটা সেতু বিভাগের কাজ। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিবিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ভোলা-বরিশাল সেতুর সমীক্ষা করা হয়েছে। এখন স্টাডি করা হচ্ছে।
বাপেক্স জানায়, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর, ভোলার গ্যাসের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে।
এই সেতুটি হলে ভোলা থেকে বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সরবরাহ সহজ হবে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুজন) ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘১২ বছর ধরেই শুনে আসছি ভোলা-বরিশাল সেতু হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান।’

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২২:৫৯   ৪৬৬ বার পঠিত