শনিবার, ১১ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে লন্ডভন্ড মনপুরা উপকূল ॥ বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত, সর্বত্রই হাহাকার

প্রচ্ছদ » জেলা » ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে লন্ডভন্ড মনপুরা উপকূল ॥ বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত, সর্বত্রই হাহাকার
বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২



আবদুল্লাহ জুয়েল, মনপুরা ॥
ভোলার মনপুরা উপকূলে ঘূর্ণীঝড় সিত্রাং এর অঘাতে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে সর্বত্র ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়। কোথাও কোথাও বেড়ীবাঁধ উপচে মেঘনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ঘূর্ণীঝড়ের আঘাতে সবচেয় বেশি ক্ষতি হয় বেড়িবাঁধের।
এছাড়াও ধানের ক্ষেত, সবজির বাগানের ক্ষতিসহ পাঁচ শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় পথে বসেছে মৎস্য চাষীরা। অপরদিকে ঘূর্ণীঝড়ের আঘাতে ঘর-বাড়ি হারিয়ে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিতে নির্বাক হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। যেন সর্বত্রই হাহাকার চলছে।

---

সোমবার গভীর রাত ১২ টায় মনপুরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণীঝড় সিত্রাং। মঙ্গলবার ভোর রাত ৪ টা পর্যন্ত এর তীব্রতায় উপজেলার সদর হাজিরহাট বাজার, থানা, পশুহাসপাতালসহ উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা মেঘনার পানিতে প্লাবিত হয়।
এদিকে মনপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন ডালচর ও কলাতলীর চরে ৮-১০ ফুট জোয়ারের প্লাবিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন চরে বসবাসরত ইউপি সদস্য আবদুর রহমান। তিনি জানান, বিচ্ছিন্ন ডালচরবাসী সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিমুদ্দিন চৌধুরীর ডাকবাংলো আশ্রয় নেয়। সেখানে সাবেক সচিবের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ডাকবাংলোয় আশ্রয় নেওয়া সকলের মাঝে শুকনো খাবার বিতরন করেন। এছাড়াও কলাতলীর চরের বাসিন্দারা স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টারসহ ঘরের চালায় আশ্রয় নেয় বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার ভোর ৬ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে প্লাবিত হয়ে রয়েছে বহু এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে অনেক পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধ মেরামত করছে পাউবো। রাস্তা ও ঘরের ওপরে গাছ পড়ে রয়েছে। ব্যাবসায়ীরা দোকানপাট খুলে ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব সহ মালামাল হেফাজত করছে। কৃষক জমিতে ও মৎস্য চাষীরা জমি ও পুকুরের কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। অনেকে ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ করতে দেখা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনার গ্রামের পূর্বপাশে নতুন বেড়ীবাঁধের ২০ মিটার ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের ১০৪০ মিটার বাঁধের ক্ষতি হয়। অপরদিকে মনপুরা ইউনিয়নের ৫০০ মিটার, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৪০০ মিটার ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১১০০ মিটার বাঁধের ক্ষতিসহ পুরো উপজেলায় ৩৩৪০ মিটার বাঁধের ক্ষতি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু হাছনাইন জানান, পুরো উপজেলায় ব্রি-৫২ জাতের ১০০ হেক্টর ধানের ক্ষতিসহ ৫০ হেক্টর সবজির বাগানের ক্ষতি হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইলিয়াছ মিয়া জানান, ঘূর্ণীঝড়ের তান্ডবে প্রবল বাতাসের তীব্রতায় উপজেলার ৩ শত বাড়ি-ঘর সম্পূর্ন ক্ষতি হয়। এছাড়াও ৫ শতাধিক আংশিক বাড়ি-ঘরের ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান। তবে ক্ষতির পরিমান আরোও বাড়তে পারে।
এদিকে হাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আবুয়াল হোসেন আবু মেম্বার জানান, রাতে পানিতে উপজেলা সদরের হাজিরহাট বাজারে ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালে ক্ষতি হয়। এতে ওই সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে চরযতিন গ্রামের মৎস্য চাষী মনিরউদ্দিনের ৩টি পুকুরের মাছ, চরযতিন গ্রামের মৎস্য চাষী জামাল উদ্দিনের ৫ টি পুকুরের মাছ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আযমের ২ টি মাছের পুকুর ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুদ্দিন সাগরের ২ টি মাছের পুকুরসহ হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের ৫ একর জমির ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়াও উপজেলার আনুমানিক ৫ শতাধিকের ওপরে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে মৎস্য চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশিষ কুমার জানান, উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেড়ীবাঁধ, কৃষি ফসল, সবজি বাগান, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ১২ মেট্রিক টন চাউলসহ ৮০ বস্তা শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্ধা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০:৩১:২৩   ২৩৪ বার পঠিত