পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ॥ দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

প্রচ্ছদ » জেলা » পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ॥ দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ
বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১



আদিল হোসেন তপু ॥
পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা  দ্বীপজেলা ভোলার ১২টি ইউনিয়নের ২৫টি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে দিনযাপন করতে হচ্ছে পানিবন্দি এলাকার হাজারো মানুষকে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে মেঘনার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে বেড়িঁবাঁধের বাইরের নিচু এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পানি বৃদ্ধির কারণে নানা ধরণের দুর্ভোগের স্বীকার স্থানীয়রা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং পূর্ণিমার প্রভাবে পানিবৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পানিবৃদ্ধির কারণে ভোলা সদর উপজেলার উপকূলবর্তী নাছির মাঝি, রাজাপুর, চর চটকিমারা, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, নেয়ামতপুর, হাজিপুর, মনপুরার চরনিজাম, কলাতলীর চর, চর যতিন, চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলা, মাঝের চর, চর শাহজালাল, কচুয়াখালীরচরসহ ২৫ চর প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

---

তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। এতে করে স্থানীয়দের রান্নাবান্না ও চলাফেরা করতে অনেক দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে।
ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের বর্তমান ৩নং ওয়ার্ডের তরিকুল ইসলাম জানান, নদীতে জোয়ার বাড়লে আমাগো এলাকায় বেড়িঁবাধ না থাকায় পানি উইঠা আমাগো ঘরবাড়ি তলায়া যায়। এত ঘরে থাকা, রান্না-বান্না করা, গরু-ছাগল রাহন অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি উঠলেই আমাগো দুর্ভোগ বারে। এহন এই দুর্ভোগ কমাইতে হলে আমাগো এলাকায় একটা বেড়িঁবাধ দেওনের দাবী জানাই।
একই এলাকার আলতাফ ফরাজি, মাইনউদ্দিনসহ আরো অনেকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা আইলে আমাদের রাজাপুর ইউনিয়নের ৩,৪,৭নং ওয়ার্ডের মানুষ পানির সাথে যুদ্ধ করে বাচঁতে হয়। পানির কারণে বসবাস করতে পারিনা। চলাচল করতে কষ্ট হয়। খাইতে লইতে কষ্ট হয় আমাগো। পোলাই চাহন অনেক রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি ফসল নষ্ট হয়, মাছ চাষ করতে পারিনা। যাও করছি তাও পানির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা হইছি। এহন  একটা রাজাপুর থেকে আনন্দ বাজার ক্লোজার হয়ে যদি একটা রিং বেড়িঁবাধ হয় তাহলে পানি থেকে রক্ষা পাইতাম।
রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান জানান, রিং বেড়িঁবাধ না থাকায় আমার এলাকার প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। এরা মূল বাধেঁর বাইরে বসবাস করার বর্ষা এলেই দুর্ভোগে পরতে হয়। তাই এই এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এখানে একটি রিং বেড়িঁবাধ দেওয়ার জন্য পান্নি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া এলাকার নাছির মাঝি এলাকার ইউসুফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পড়েছে মানুষ। বাঁধের বাইরের এসব মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমরা যে কষ্টে আছে এই কোন খোজঁ খবর লয় না। এখন আমাগো এলাকায় একটা রিং বেড়িঁবাধ দিলে আর পানি উঠতো না আর।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন পানিতে  ঢালচর ও চর নিজামের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের চরপাতিলার বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
ঢালচরের বাসিন্দা কাওসার হোসেন বলেন, রাতের দিনে দুবার জোয়ারে পানিতে ঢালচর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। এমনকি ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলেও এখনো তেমন ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা নেই। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চগুলো জোয়াড়ের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভাটায় নেমে গেছে। এতে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। মূলত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন হয়েছে। তবে এখন তেমন ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নদী তীরবর্তী যে সকল ইউনিয়ন রয়েছে সেসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে আমি কথা বলেছি। যেহেতু জোয়ারে বেড়িবাঁধের বাইরে প্লাবিত হয়েছে। তাই তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারপরও আমরা খোঁজ রাখছি। কোথাও কোন ক্ষয় ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২০:৪৮   ৩৭৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত, তবু লোডশেডিং
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
লালমোহনে তীব্র গরমে মুরগির খামারিদের বাড়ছে দুশ্চিন্তা
আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিবেন: চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারেফ হোসেন
অটো চেয়ারম্যান হওয়ার দিন শেষ জনগনের ভোট লাগবে: চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ইউনুছ
ভোলায় পৃথক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু
ভোলায় ডিবির অভিযানে অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, অপহৃতরা উদ্ধার
আজকের ভোলার স্টাফ রিপোর্টার বাবু কান্তিলাল গাঙ্গুলী আর নেই
ভোলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন
ভোলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারেফ হোসেনের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন



আর্কাইভ