আশ্রয়ণের ঘর লাখ টাকায় বিক্রি!

প্রচ্ছদ » অপরাধ » আশ্রয়ণের ঘর লাখ টাকায় বিক্রি!
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫



---

লালমোহন প্রতিনিধি ॥

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভোলার লালমোহন উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয় অন্তত ১৫০০ আধা পাকা বসতঘর। কয়েকটি ধাপে পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত হয় এসব বসতঘরগুলো।

নিজস্ব ভূমি ও গৃহ থাকার পরেও এসব ঘর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকে হাতিয়ে নেন। তাই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পরেও এখন থাকছেন না অনেকে। আবার কেউ কেউ এসব ঘরে আীয়-স্বজনদের থাকতে দিয়েছেন, অনেকে বরাদ্দের ঘর বিক্রি করে চলে গেছেন অন্যত্র। আবার সরকারি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করতে কোথাও কোথাও ঝুলানো হয়েছে বিক্রির বিজ্ঞপ্তিও।

সরেজমিন লালমোহন উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

জানা যায়, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া এলাকায় পাশাপাশি মুজিববর্ষের দুইটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি প্রকল্পে ৬৮টি ঘর থাকলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে ৪০টি পরিবারকে। বাকি ২৮টি ঘরের কাগজপত্র এখনো কাউকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। যেসব ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানের অনেক ঘরেও ঠিকমতো কারও বসবাস নেই। মূলত ঘর নির্মাণের সময় যেসব ক্যাটাগরি বিবেচনা করে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল তা মানা হয়নি। যার কারণে নিজস্ব ভূমি ও গৃহ থাকার পরেও অনেকে এসব ঘর হাতিয়ে নিয়েছেন।

পাঙাশিয়া এলাকার আরেকটি আশ্রয়ণের ৭ নম্বর ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে লেখা রয়েছে ‘ঘর বিক্রি করা হবে’ এবং একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। ওই মোবাইল নম্বরে কল দিলে তিনি রিসিভ করে নিজের নাম হাসিব বলে পরিচয় দেন। তার বাবার নাম ছিদ্দিক। তিনি ওই এলাকার মুনসুর আলী মাতাব্বর বাড়ির বাসিন্দা। যে ঘর বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে সেটি মূলত তার মা রুমা বেগমের নামে বরাদ্দ পাওয়া।

ওই ঘর বিক্রি করবেন কী না জানতে চাইলে হাসিব জানান, একদিন আগেই এক লাখ টাকায় একজনের সঙ্গে ঘরটি বিক্রির বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এই আশ্রয়ণে মোট ৪১টি ঘর রয়েছে। এখানেও অনেকগুলো ঘর তালাবদ্ধ। অনেকে আবার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে বাস করছেন।

শুধু ওইসব এলাকায় নয়, সরকারি আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দে এমন অনিয়ম দেখা গেছে লালমোহন উপজেলায় মুজিববর্ষে নির্মিত সকল আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সরকারি ঘর নিয়ে এমন কর্মকা-ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

তারা বলছেন, যারা প্রকৃত ঘর পাওয়ার কথা ছিল তারা ঘর পাননি। কিন্তু যাদের জমি এবং নিজের ঘর আছে তাদের ঘর দেওয়া হয়েছে। মূলত তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীনরা মোটা অঙ্কর টাকার বিনিময়ে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বঞ্চিত করে এসব ঘর বরাদ্দ নেন। এতে করে জনগণের টাকার অপচয় হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন পূণরায় এসব ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করেন।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ জানান, অনেক আশ্রয়ণে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেনি, যার কারণে অনেক সেখানে থাকছেন না। কেউ আবার এলাকার বাইরে কর্মস্থলে থাকেন। তবে যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তারা যদি বিক্রি করেন, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের ঘর বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১:০৯:৫৬   ১৭৭ বার পঠিত  







পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


ভোলায় নগদ টাকা-স্বর্ণ অলংকারসহ গৃহবধু উধাও, মামলার হুমকি
ভোলায় জমি নিয়ে বিরোধ: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ
ভোলা ও বরগুনায় কোস্টগার্ডের পৃথক অভিযানে ইয়াবা-গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক
ছেলের প্রতারণায় জমি হারালেন মা, ঘরে আগুন বিচার চান মনোয়ারা
চরফ্যাশনে আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামী জসিম গ্রেফতার
চরফ্যাশন লঞ্চঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, যাত্রীদের ক্ষোভ
মনপুরার মেঘনায় যৌথ অভিযানে নিষিদ্ধ চাই ও মটকা জব্দ
ভোলা ও পাথরঘাটায় পৃথক অভিযানে ইয়াবা, গাঁজা ও নগদ অর্থসহ ৩ মাদক কারবারি আটক
ভোলায় গাঁজাসহ দুই কারবারীকে আটক
ভোলায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক



আর্কাইভ