
স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলায় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত পুলিশ-সাংবাদিকসহ উভয় দলের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকও রয়েছেন। তাঁরা হলেন- ভোলা সদর থানার উপপরিদর্শক আউয়াল, দৈনিক আজকের ভোলার সহ-সম্পাদক ও দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম শাহরিয়ার ঝিলন, নিউজ২৪-এর ক্যামেরাপারসন রানা ইসলাম।
এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাকটেল নিক্ষেপ করে উভয় পক্ষ। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার জন্য এক দল অপর দলকে দায়ী করেছে। একপর্যায়ে নতুন বাজার থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের নতুন বাজার ও পৌরসভার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টায় নতুন বাজার বিজেপি কার্যালয় থেকে গরুর গাড়ি মার্কার প্রচারনা ও র্যালী বের করেন দলটির নেতাকর্মীরা। র্যালিটি সদর রোড ও চকবাজার ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে এসে সমাবেশ করে। এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাজনপট্টি দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি সদর রোড, বাংলাস্কুল মোড় ঘুরে নতুন বাজার প্রবেশ করলে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় দুই দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষপের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় বিজেপি অফিসের বেশ কিছু আসবাবপত্র। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি গাড়ি, দোকান ও রাজনৈতিক দলের পোস্টার-ব্যানার ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের পর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলার অভিযোগ করেন। ভোলা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রাইসুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্বিত ও বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ মিছিল ছিল। প্রশাসনের দেওয়া সময় অনুযায়ী দুপুর সাড়ে ১২টায় মিছিল শুরু হয়। বিজেপির মিছিল ১২টার আগেই শেষ করার কথা ছিল। আমাদের মিছিল বাংলাস্কুল মোড়ে গেলে মুখোমুখি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের (বিজেপি) ফিরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু সে কথা উপেক্ষা করে তারা ঢিল ছোড়ে। এই ঢিল ছোড়া কেন্দ্র করে গ-গোল শুরু হয়। বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে কিছু বহিরাগত ছিল সেখানে।’
বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সোপান অভিযোগ করেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিলে তারা (বিজেপি) হামলা চালিয়েছে। আমাদের ১০ থেকে ১৫ আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম জানা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক বলেন, তাঁদের সদর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. হেলাল উদ্দিনকে বিজেপির নেতারা কটাক্ষ করায় তাঁরা আজ প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সকাল ১০টায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বাংলা স্কুল মোড়ে গেলে দুটি বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এ সময় তাঁদের লক্ষ্য করে বিজেপির কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এরপরই সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিএনপির অন্তত ২৫ জন আহত হন।
ভোলা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, বিজেপির নেতা-কর্মীরা গরুর গাড়ির মার্কার প্রচারনা ও র্যালী শেষে দলীয় কার্যালয়ে সভা করছিলেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। এতে তাঁদের ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
তবে বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেপির অঙ্গসংগঠনের প্রোগ্রাম ছিল আজ। পুলিশের গাইডলাইন অনুযায়ী তারা সভা করেছে। সভার শেষ পর্যায়ে বিএনপির একটি গ্রুপ হামলা চালিয়েছে।’ দলের ৩৬ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছয়জনকে বরিশালে ও ৩০ জনকে ভোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ হামলাকারীরা বিজেপির অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর বলে দাবি করেন তিনি। বিএনপির মিছিলে হামলা করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু শাহাদৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, বিএনপির মিছিলকারী ডিসি অফিসের সামনে দিয়ে না গিয়ে জোর করে নতুন বাজারে দিকে রওয়ানা করে। প্রেস ক্লাবের সামনে এলে বিজেপির পার্টি অফিস থেকে লোকজন পৌরসভার দিকে আগায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যারা আইন অমান্য করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন বাজার ও বিজেপি অফিসের সামনে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২:১৭:৫৩ ১৩৭ বার পঠিত