
মো. বেল্লাল নাফিজ ॥
জুন থেকে নভেম্বর ইলিশের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর প্রথমার্ধে ভোলার নদীগুলোতে তেমন ইলিশ ধরা পরেনি জেলেদের জালে। এর মধ্যে নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিলো। নিষেধাজ্ঞার পর বর্তমানে কিছুটা সরবরাহ বাড়লেও ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে জানান ক্রেতারা। সাধারণত ইলিশের সরবরাহ বাড়লে স্থানীয় ঘাট থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বাজারে মাছের দাম কমে আসে। তাই বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ মৌসুমে কম দামে ইলিশ কিনে খাওয়া অপেক্ষায় থাকেন ভোক্তারা। কিন্তু এবার হাতাশ হতে হয়েছে তাদের। কারণ, বর্তমানে দাম কমার পরেও যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে অনেকের পক্ষেই কিনে খাওয়া কঠিন। ইলিশের বাজার চিত্র বলছে, গত বছরের একই মৌসুমের চেয়ে এবার দাম অনেকখানি বাড়তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০শে অক্টোবর) ভোলা সদরের মেঘনাপাড়ের তুলাতুলি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলে, আড়ৎদার, ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের ইলিশ কেনাবেচার মহোৎসব চলছে। জেলে, পাইকার আর আড়ৎদারদের হাকডাকে মুখরিত মাছঘাট ও বাজারগুলো।
এছাড়াও ভোলার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ২৪শ থেকে ২৬শ টাকা কেজি, আর এক কেজির একটু কম ওজনেরগুলো ২২শ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি, ৫শ গ্রাম থেকে ৭শ গ্রামের ওজনেরগুলো ১হাজার থেকে ১২শ টাকা এবং জাটকা অর্থাৎ যেসব মাছের ওজন ২শ থেকে ২.৫ শ গ্রাম সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৭শ টাকা প্রতি কেজি। যা অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবি আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, আড়ৎ ঘুরেও ইলিশের দরদাম করে পেরে উঠছিলেন না। কাক্সিক্ষত দামের মধ্যে না পাওয়ায় শেষমেশ সাধের ইলিশটি আর কেনা হয়নি তার। তিনি বলেন, এতদিন দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। এখন মৌসুম চলছে, দাম কমেছে শুনে এলাম। কিন্তু এখনও যে দাম চাইছে, তা অত্যাধিক বেশি। এত দাম দিয়ে ইলিশ কিনে খাওয়া আমাদের জন্য বিলাসিতা হয়ে যাবে। দেখি দাম কমলে কিনব।
তুলাতুলি মেঘনা ঘাট এলাকার জেলে কবির মাঝি, সালাউদ্দিন ও মিরাজ মাঝি বলেন, রাতে যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছি তা সন্তোষজনক। এভাবে আমাদের জালে ইলিশ ধরা পড়লে ২২ দিনের ধারদেনা পরিশোধ করতে সমস্যা হবেনা।
ভোলার পূর্ব ইলিশা মাছঘাটের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া জানান, এবার ইলিশ প্রজনন মৌসুমে নদীতে প্রচুর পরিমাণ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। আর এ কারণে মেঘনা-তেতুলিয়া ও তৎসংলগ্ন শাখা নদীগুলোতে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি। তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
সদর উপজেলার ইলিশা ঘাটের আড়ৎদার নিরব অজি বলেন, এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করছি। প্রকারভেদে ২ হাজার ৬০০ টাকাও বিক্রি করছি। আগে এগুলো ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর এমন সময় খুচরা বাজারে যে ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ভোলার চরফ্যাশনের সামরাজ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল হাসেম জানান, ভরা মৌসুমে কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা না পড়লেও এই সাপ্তাহ থেকে কিছুটা বুদ্ধি পেয়েছে। বছরের এমন সময় ঘাটে ইলিশের আমদানি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে সামদ্রিক মাছের সরবরাহ কয়েকগুণ বেড়েছে। ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় দামে এখনও স্বস্তি মিলছে না। তারপরও পাইকারি দর আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
তবে,প্রতিবেদনকালে ইলিশের দাম না কমার পিছনে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে আসার পর তার সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক খরচ যোগ হয় চূড়ান্ত পর্যায়ে ইলিশ মাছের দামের সঙ্গে। এর মধ্যে রয়েছে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার সময়কালে জেলেদের জীবনধারণ ব্যয়, উৎপাদকের মুনাফা, আড়ত কমিশন, সংরক্ষণ ব্যয়, পাইকারের মুনাফা, খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফা ইত্যাদি। সার্বিক খরচসহ এর প্রভাব পরে ভোক্তার উপর।
ভোলা মৎস্য বিভাগের জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিলো। নিষেধাজ্ঞার পর সাধারণত নদীতে ইলিশ কমলেও সমুদ্রের সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ বেড়েছে। সামুদ্রিক মাছের চাহিদা কম হওয়ায় নদীর ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধি ও দামও স্বাভাবিকত বেশি রয়েছে।
এছাড়াও মৎস্য বিভাগের দাবি, ইলিশের দাম না কমার পেছনে সিন্ডিকেট ও দাদন প্রথার মতো বিভিন্ন স্তরের অনিয়মও দায়ী। তাদের মতে, মাছ ধরা থেকে শুরু করে আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ইলিশের দামে প্রভাব পরে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৫:১০ ২৭৫ বার পঠিত