
আকতারুল ইসলাম আকাশ ॥
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) মো. শফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ফের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। এবার অভিযোগ করেছেন মনিরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে মনিরুল ইসলাম জানান, ১৬ অক্টোবর সকালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে গেলে শফিকুল ইসলাম তাঁকে ভর্তি না নিয়ে জরুরি বিভাগ থেকেই দালালের মাধ্যমে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে টেস্ট করতে পাঠান।
এরপর টেস্টের রিপোর্ট আসার আগেই শফিকুল ইসলাম তাঁকে নিজের চেম্বার ‘জননী মেডিকেল’-এ নিয়ে চারটি ইনজেকশন পুশ করেন এবং একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে ৩০০ টাকা ভিজিট নেন।
মনিরুল অভিযোগ করেন, “চেম্বার থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইনজেকশনের প্রভাবে আমি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে হাসপাতালে ফিরে ভর্তি হই। সেখানে আমার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বিষয়টি জানাতে গেলে শফিকুল কৌশলে প্রেসক্রিপশন ছিঁড়ে ফেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।”
এর আগে গত ১৯ জুলাই শফিকুল ইসলামের ভুল চিকিৎসায় তানভীর হাসান (৮) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। তখনও তিনি জ্বরজনিত রোগী হিসেবে শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে একসঙ্গে চারটি অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার পর শিশুটির হাত-পা ফুলে কালো হয়ে যায়। পরে চিকিৎসার স্বার্থে শিশুটির দুটি হাত ও পা কেটে ফেলতে হয়। টানা চার মাস চিকিৎসার পর শিশুটি মারা যায়।
ঘটনার পর শিশুটির পরিবার ভুল চিকিৎসার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় এক মাস কারাভোগের পর ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে জামিনে মুক্তি পান শফিকুল ইসলাম। জামিনে বের হয়ে আবারও একই ধরনের অভিযোগের মুখে পড়লেন তিনি।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম ও মৃত তানভীর দুজনই বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা।
এছাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্যাকমো শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম ও দালালচক্র পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের কৌশলে নিজের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে টেস্ট ও চিকিৎসার নামে আর্থিক লেনদেন করেন তিনি। তাঁর টার্গেট থাকে গ্রামের সহজ-সরল রোগীরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্যাকমো শফিকুল ইসলাম বলেন, “মনিরকে শুধু টেস্টের পরামর্শ দিয়েছিলাম, কোনো ইনজেকশন বা চিকিৎসা দিইনি। শিশু তানভীরের ঘটনায় আকিব নামের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ীও আসামি। সেই শত্রুতার জেরে আকিব মনিরকে দিয়ে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছে।”
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কেএম রিজওয়ানুল ইসলাম জানান, “শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত কমিটি কাজ করছে। অভিযোগের সত্যতা মিললে দ্রুত কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৭:০০ ৮৭০ বার পঠিত