
ইব্রাহিম আকতার আকাশ ॥
দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশিভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসতলা এলাকার ৯০ বছরের বৃদ্ধা ফজলেতুন নেসা আজ আশ্রয় নিয়েছেন গোয়াল ঘরে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে থাকার পরও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের থাকার জায়গা হারিয়েছেন এই অসহায় মা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী খলিল মোকাম্মেল মারা যান। মৃত্যুর পর ফজলেতুন নেসার নামে থাকা প্রায় ৩ শতাংশ জমি তিনি ভালোবাসার টানে তিন ছেলের নামে দলিল করে দেন। কিন্তু সেই দলিলের পর থেকেই শুরু হয় তার দুঃখের জীবন। একে একে ছেলেদের ঘর থেকে ঠাঁই হারিয়ে এখন তিনি গরু রাখার গোয়াল ঘরে বসবাস করছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, “বৃদ্ধা ফজলেতুন নেসা এখন চলাফেরাও করতে পারেন না। রাতে ঠান্ডায় কাঁপেন, দিনে রোদে পুড়েন। অথচ তারই পেটের পাঁচ সন্তান পাশের ঘরে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছে।”
স্থানীয় আরিফ নামের এক যুবক জানান, “আমরা অনেকবার ছেলেদের অনুরোধ করেছি মাকে অন্তত মানবিকভাবে একটু জায়গা দিতে। কিন্তু তারা কেউই শুনতে চান না। এখন গ্রামের মানুষই মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে সাহায্য করে।”
এওয়াজপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু ফয়েজ বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে মা যদি ছেলেমেয়ের ঘরে ঠাঁই না পান, তাহলে সমাজে মানবিকতা কোথায় টিকবে? আমরা বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি, প্রয়োজনে সমাজসেবা অফিসেও জানানো হবে।”
বর্তমানে গোয়াল ঘরের এক কোণে পুরোনো কাপড় দিয়ে ঘেরা জায়গায় বসবাস করছেন বৃদ্ধা ফজলেতুন নেসা। মাথার ওপর টিন ফুটো, নিচে ভেজা মাটি। তবু সন্তানের মুখ চেয়ে চুপচাপ সহ্য করছেন জীবনের শেষ প্রহর।
স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন-যেন অসহায় এই মায়ের জন্য একটি মানবিক আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এ যেন এক নিদারুণ সামাজিক বাস্তবতা’ যেখানে সন্তান সফল, ঘরবাড়ি সমৃদ্ধ; অথচ জন্মদাত্রী মা আশ্রয় নিয়েছেন গরুর গোয়ালে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এখন সময় এসেছে সমাজে মানবিকতার নতুন আলো জ্বালানোর।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২২:৫৬ ৮৭ বার পঠিত