
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার তজুমদ্দিনে শ্রমিকদল, যুবদল, কলেজ ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার (১ জুলাই) সাতজনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান। এর আগে রোববার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে বাদী। এঘটনায় পুলিশ ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে মামলার বাদীরা দ্বিতীয় স্ত্রীকে আটক করে।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর স্বামী তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে ঢাকায় একটি হোটেলে চাকুরি করেন। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী জানান, ১৪-১৫ দিন আগে সে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। পরে গত শনিবার দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন।
সেখানে রাতের বেলা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক মো. রাসেল আহমেদসহ পাঁচ-ছয়জনের একটি দল ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। তাঁরা এসেই আমাকে মারধর করেন। এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করবেন না উল্লেখ করে তাঁরা চার লাখ টাকা চাঁদাদাবী করেন। তবে তিনি এত টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে আবার রড-হাতুড়ি দিয়ে হাতে-পিঠে মারতে থাকেন। তাঁকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করেন।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, খবর পেয়ে রোববার সকালে তাঁর প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম স্ত্রীকে দেখে আবারও রড-হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী হামলাকারীদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা চার লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন প্রথম স্ত্রী তাঁর শ্বশুরকে ফোন করে টাকার জন্য বলেন। টাকা আসছে শুনে-হামলাকারীরা প্রথম স্ত্রীকে ঘরে রেখে স্বামীকে দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে যান।
ওই নারী বলেন, তাঁর স্বামীকে বের করে নিয়ে যাওযার পর সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালা আটকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তিনি চিৎকার করলে বাড়ির নারীরা দরজা-জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে রক্ষা করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী দম্পতি বলেন, সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে তাঁদের ছেড়ে দেন। এর পর থেকে প্রথম স্ত্রী গ্রামে ফিরে বারবার আত্মহত্যা করতে যান। আর গ্রামবাসী উদ্ধার করেন। অবশেষে তাঁরা গ্রামবাসীর কাছে ঘটনা খুলে বলেন। গ্রামের বাসিন্দারা তখন ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশে খবর দেন।
সোমবার পুলিশ এসে তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। এঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে ধর্ষনের সহযোগী হিসেবে ঝর্ণাকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
এঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী মো. রুবেল বাদী হয়ে ৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে তজুমদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন, আলাউদ্দিন, ফরিদউদ্দিন, রাসেল, ঝর্ণা বেগম, আলমগীর হোসেন, মানিক ও মামুন। মামলা নং ১০।
ধর্ষনের ঘটনায় তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি ও সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকের ব্যানারে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধন করা হয়। উপজেলা বিএনপি শশীগঞ্জ সদর রোডে বিকাল ৩টায় মানববন্ধন করে। আর সচেতন নাগরিকের ব্যানার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদল মোল্লারপুকুর এলাকায় বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। বিএনপির মানববন্ধন শেষে চাঁদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক স¤পাদক রবিউল ডুবাই, চাঁদপুর ইউনিয়ন উত্তর বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশি জাহিদ হাসান দিদার, যুবদল নেতা ইকবাল, ছাত্রদলের আহবায়ক মামুন, শ্রমিকদলের সভাপতি ইকবাল হোসেন লিটন, সম্পাদক সেলিম, চাঁদপুর ইউনিয়ন উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি নাজিম, কাজল ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসময় সচেতন নাগরিকের ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেয়া ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতরা হলেন, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রাসেল, ছাত্রদল নেতা মেহেদী, নাবাবার, মেহেরাব, শাকিল, শামীমসহ ২৫ জন আহত হয়। আহতদের ৫ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল আহমেদ রুপালী বাংলাদেশকে মুঠোফোনে বলেন, যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে তিনি একসময় থাকতেন, তিনি এখন সেখানে থাকেন না। সেখানে আরেক রাসেল আছে। কিন্তু তজুমদ্দিনে বিবদমান বিএনপির ষড়যন্ত্রে পড়ে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
মামলার আরেক আসামি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনি তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী। তাঁকেও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানো হচ্ছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে জানিয়েছেন, আসামীদের রাজনৈতিক পরিচয় মূল বিষয় নয়। দোষি সে যেই হোক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধর্ষিতাকে ডাক্তার পরীক্ষায় জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার স্বামী রুবেল বলেন, আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তজুমদ্দিনের অনেক রাঘব বোয়ালরা জড়িত। তাদের নাম প্রকাশ করলে আমার বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হবে।
এদিকে চাঁদার দাবীতে স্বামীকে নির্যাতন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় কেন্দ্রী ছাত্রদল ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক রাসেল ও যুগ্ম আহবায়ক জয়নাল আবদীন সজীবকে ছাত্রদলের পদ থেকে বহিস্কার করে ছাত্রদল নেতাকর্মিদের নির্দেশনা দেন তাদের সাথে দলীয় কোনরূপ সম্পর্ক না রাখতে।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫০:৪০ ৯৬ বার পঠিত