আশায় ওদের মাস পেরিয়ে বছর হয়, তবুও পূরণ হয় না আশা!

প্রচ্ছদ » জেলা » আশায় ওদের মাস পেরিয়ে বছর হয়, তবুও পূরণ হয় না আশা!
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫



---

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

নদী-সাগরে মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে নদী-সাগরে কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। তাই আশায় থাকতে হয় তাদের। এই বুঝি নিষেধাজ্ঞা শেষে দেখা মিলবে কাঙ্খিত মাছের। বেশি বর্ষা হলে তখন নদীতে পানি বেড়ে হয়তো ঘুরবে ভাগ্যের চাকা। তবে দিন শেষ হয়ে মাস পেরোয়, মাস পেরিয়ে বছর। তবুও জেলেদের আশা পূরণ হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ভোলার লালমোহন উপজেলার জেলেরা বুকের ভেতর পুষে রেখেছেন নিরব আর্তনাদ। এই উপজেলার সব কয়টি জেলে পল্লীতেই এখন চরম হাহাকার।

লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের বাতির খাল মৎস্যঘাট এলাকার জেলে মো. মোসলেহ উদ্দিন মাঝি জানান, আমি নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। গত ২৫ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে নদীতে তেমন মাছ নেই। কয়েকদিন আগে তিন দিনের জন্য ১৩ জন জেলেকে নিয়ে নদীতে গিয়েছি মাছ শিকারে। এতে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। নদী থেকে তীরে ফিরে মাছ বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র ৪ হাজার টাকার। এতে লাভের চেয়েও লোকসান হয়েছে কয়েক গুন। তাই এখন আর নদীতে যাই না, ধারদেনা করে চলছি। দীর্ঘদিন নদীতে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে অন্তত ৬ লাখ টাকা দেনায় জড়িয়েছি।

তিনি আরো জানান, সংসারে মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই ছেলে, এক মেয়ে আছে। আমার যেহেতু মাছ ধরার আয়ে সংসার চলে, সে কারণে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় এখন দেনা করে কোনো রকমে চলছি। সরকারিভাবে দুই মাসের চাল সহযোগিতা পেয়েছি, যা অপ্রতুল। ৭০-৮০ কেজি চাল দিয়ে কী আর সংসার চলে? তাই সরকারের কাছে আমার দাবি; এই বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করার এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের।

একই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী আরেক জেলে মো. ফারুক মাঝি। তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে মাছ শিকার করছেন। এই আয়েই চলছে তার সংসার। গত ১০ দিন আগে মাছ শিকারের লক্ষ্যে ভোরে নদীতে নেমে দুপুরে তীরে ফিরেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকার মতো। তবে তিনি নদী থেকে ফিরে আড়াই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পেরেছেন। এতে লোকসান হয়েছে তারও। তাই এখন আর নদীতে যাচ্ছেন না তিনি। এখন দেনা করে সংসার চলছে তার। তিনি এতোই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন, এখন দোকানদাররাও কোনো সদাই বাকি দেন না তাকে। সব জেলেদের এই সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ফারুক মাঝির।

---

উপজেলা মৎস্য দফতরের তথ্যমতে, এই উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে আছেন ২৪ হাজার ৮৪০ জন। তবে প্রকৃত জেলে আরো বেশি। এসব জেলেরা উপজেলার অন্তত ২৭টি মৎস্যঘাট দিয়ে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী এবং সাগরে মাছ শিকারের জন্য যান।

লালমোহন উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নাব্যতা সংকট, অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি, নদী দূষণ এবং অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে জেলেরা কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না। তবে আশা করছি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে নদীতে মাছ বাড়বে।

তখন জেলেরা আরো ভালো পরিমাণে মাছ পাবেন। এ ছাড়া জেলেদের মানবিক কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফের চাল শতভাগ জেলে পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। একইসঙ্গে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আরো কিছু প্রকল্প গ্রহণের জন্য মৎস্য অধিদফতরের কাছে আমরা চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ০:০৫:৪৮   ৮৫ বার পঠিত  







পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


তেতুলিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন: দুইজন আটক, চারটি ড্রেজার জব্দ
ভোলায় ৭ কোটি টাকার কারেন্ট জাল-পলিথিন-সিগারেট জব্দ
সাকিবের এমপি হওয়া ভুলে গেলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে: আমিনুল হক
মাছ ধরা নৌকাগুলোকে গভীর সাগরে যেতে মানা
মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ভরা মৌসুমেও কাংখিত ইলিশের দেখা নেই
তজুমদ্দিনে নেত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলদারি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ভোলায় গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ ও গণমিছিল
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: হাসপাতাল যেন ময়লার ভাগাড়
দৈনিক আজকের ভোলার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ভোলায় বিএনপির রক্তদান কর্মসূচী পালন



আর্কাইভ