
চরফ্যাশন প্রতিনিধি॥
ভোলা জেলার চরফ্যাশনে তেঁতুলিয়ার অব্যাহত ভাঙনে নদীপারের কয়েক লাখ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ভাঙনে উপজেলার দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। চলতি বছর বর্ষা না আসতেই ৮শ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমিসহ ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ। পাশাপাশি নতুন করে আরও দুই সহস্রাধিক পরিবার নিঃস্ব ও গৃহহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভাঙনকবলিত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রামের কাশেম মিয়ার বাজার থেকে ৯নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন রোধের দাবি জানান তাদের।
যদিও ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙনকবলিত মানুষেরা এখন কোথাও আশ্রয় না পেয়ে নদীর পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। চরফ্যাশনে জেগে ওঠা নতুন নতুন চরে ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলোকে বসতি গড়তে দেওয়ার দাবি উঠেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, ৩-৪ বছর ধরে উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রামের কাশেম মিয়ার বাজার থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে ওই এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নীলকমল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ৮০ বছরের জয়নাল আবেদিন জানান, ২ একর জমি বন্দোবস্ত সূত্রে মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে তিনি বসতি গড়েন এ ইউনিয়নে। গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়ার ভাঙনে ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি বসতি গড়েছেন বেড়িবাঁধের ঢালে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
গ্রামের তাহেরা খাতুন জানান, তার বসতভিটা দুইবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় এ বসতভিটা করেছেন। বর্তমানে নদী আবার ভাঙতে শুরু করেছে। নিজের জমি-জমাও নেই।
তাই বসতঘর ভেঙে কোথায় নিয়ে যাবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
একই গ্রামের রাহিমা বেগম জানান, তার বসতভিটা তেঁতুলিয়া নদীর গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানের স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, তার স্বামী আরিফ রিকশাচালক। স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলে। তার স্বামী যা আয় করে তা দিয়ে পরিবারের সবার কোনো রকম তিন বেলা খাবার জুটে। কোনো সঞ্চয় নেই। আর স্বামীর এমনও আয় নেই যে জমি কিনে আবার বাড়ি করবেন। তাই তার পরিবার অসহায় হয়ে জীবন যাপন করছে।
একই ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, আগে ৩-৪ কানি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে সংসার চালাতেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চাষাবাদ করে ভালোই আয়-রোজগার হতো তার। গত কয়েক বছর তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের কারণে নিজের ফসলি জমি ও অন্যের কাছ থেকে বর্গা নেওয়া পুরো জমিই নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন কৃষি কাজ করতে পারেন না। আর সংসার চালাতে ছেলে ঢাকায় গিয়ে ছোটখাটো চাকরি নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিখন, শাহিন মাহমুদ ও জিহাদ জানান, গত ৩-৪ বছরে নীলকমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রাম তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এতে অনেকে তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে আবারো নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি, অতি দ্রুত সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন বন্ধ করা হোক। যদি অতি দ্রুত ভাঙন রোধের পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে নদী ভাঙনের কারণে আরও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, অধিক ভাঙনকবলিত এলাকায় ৮৬০ মিটারের মধ্যে আপাতত ১১০ মিটার এলাকায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হচ্ছে। আরও বরাদ্দ এলে বাকি এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩০:০৮ ৭৭ বার পঠিত