উপকূল রক্ষা করুন, জলবায়ু অর্থায়ন বাজেটে জিডিপির ৩% বরাদ্দ করুন: সেমিনারে বক্তারা

প্রচ্ছদ » জলবায়ু » উপকূল রক্ষা করুন, জলবায়ু অর্থায়ন বাজেটে জিডিপির ৩% বরাদ্দ করুন: সেমিনারে বক্তারা
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫



---

আজকের ভোলা রিপোর্ট ॥

জলবায়ু খাতে বাজেট বরাদ্দ পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত নয়। দুর্বল ও অপর্যাপ্ত উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে উপকূল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি। উপকূলবাসীর দাবি সর্বদাই উপেক্ষিত হয়েছে। জাতীয় বাজেটে জিডিপির নূন্যতম ৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ৪ কোটি উপকূলীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার টেকসই সুরক্ষায় খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য টেকসই পুনর্বাসন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন যেমন-সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণ, স্যানিটেশন, কৃষি এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হবে।

বুধবার (২৮ মে) ঢাকার তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবিডি আয়োজিত “জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬; জলবায়ু বাজেট ও বাংলাদেশ উপকূল” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারটির সহ-আয়োজনকারী সংস্থাগুলো হলো কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিপিআরডি, সিডিপি, ওয়াটার কিপারর্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, বিসিজেএফ, উদয়ন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ও এসডিআই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারার সভাপতিত্বে এবং কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় উক্ত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহবায়ক জাবেদ রাসিন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাউসার রহমান, পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সম্পাদক মো: মোতাহার হোসেন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ রফিকুল আলম, সিডিপি-এর নির্বাহী পরিচালক, সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম এসডিআই এর সহকারি পরিচালক, আশরাফ হোসেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রসুল বাবুল, বিএনএনআরসি-এর নির্বাহী পরিচালক এএইচএম বজলুর রহমানসহ অন্যান্যরা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম এ. হাসান।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী জলবায়ু বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না, সরকার এখনো জিডিপির মাত্র ০.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দিচ্ছে যেখানে প্রয়োজন নূন্যতম ৩ শতংশ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত কৌশলগত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে বিনিয়োগ চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে জিডিপির নূন্যতম ৩ শতাংশ, অর্থ্যাৎ ১ লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, উপকূল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, একবারে সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে, আমরা আর মাটির বাঁধ চাই না। তিনি বলেন সুপেয় পানির সংকট দূর করতে জলবায়ু সহিষ্ণু পানি শোধনাগার স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, পর্যাপ্ত গবেষনা, সক্ষমতা উন্নয়ন ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা তার বক্তব্যে বিগত সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পরিবেশ ধ্বংসকারী উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, প্রথমেই আমাদেরকে রামপাল, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মত প্রকল্প থেকে সরে আসতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় যত্রতত্র জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পগড়ে উঠার কারণে উপকূলীয় বন ধ্বংস হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তিনি বাজেট প্রণয়নের তুলনায় বাজেটের সঠিক ব্যায়ের উপর গুরুত্ব দেন, তিনি বলেন গবেষনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল গুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে নদী খনন ব্যবস্থার উপর জোর দেন।

এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এত বছর বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু উপকূলবাসীর সুরক্ষার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। তিনি বলেন, মূল ভুখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোকে যুক্ত করতে হবে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে এবং নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করেই আমাদের বাজেট প্রণয়ণ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম-আহবায়ক জাবেদ রাসিন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ রক্ষার পাশাপাশি বনায়ন সৃষ্টির উপর জোড়দেন, তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, সেজন্য বাজেটে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, আন্ত:-সীমান্ত নদীর সমস্যা সমাধান ছাড়া ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি বাঁধ ব্যবস্থাপনা স্থানীয় জনগণের গরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫% হচ্ছে শিশু, কিন্তু এরা জাতীয় বাজেট নেই, সবশেষে তিনি পানি ব্যবস্থা নীতি, নিরাপদ মাইগ্রেশন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন।

সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম তার বক্তব্যে অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণয়নের কথা তুলে ধরেন।

কাউসার রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের অভিযোজন সক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। রফিকুল আলম বলেন, বারদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্ত: মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় সাধন করতে হবে। ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ এর ইকবাল ফারুক বলেন, গতানুগতিক বরাদ্দ নয় চাহিদা ভিত্তিক বরাদ্দে দিতে হবে, এম.এ. হাসান বলেন, দুর্যোগ সহনশীল কংক্রিটের টেকসইবাঁধ নির্মান করতে গতানুগতিক বরাদ্দের বাহিরে পৃথক [১০০০০- ১২০০০ কোটি টাকা] বরাদ্দ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকারের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১:১১:১১   ১৭৮ বার পঠিত  







পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জলবায়ু’র আরও খবর


ভোলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
মনপুরা উপকূলের নিম্নাঞ্চল ৫-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত, পানিবন্দি ৩ হাজার মানুষ
ভোলায় পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ, ভেঙে গেছে জলকপাট
তজুমদ্দিনে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী
উপকূল রক্ষা করুন, জলবায়ু অর্থায়ন বাজেটে জিডিপির ৩% বরাদ্দ করুন: সেমিনারে বক্তারা
চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র আগাম প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত
ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জে মোকাবেলায় দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
ঋণ তৈরির হাতিয়ার নয়; দুর্যোগ প্রশমনে বাংলাদেশকে নিজস্ব তহবিল নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে
ভোলায় জলবায়ু বিপদাপন্নতা, আরইসিপি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ভোলায় জলবায়ু সহনশীল জীবিকায়ন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করনে আলোচনা সভা



আর্কাইভ