বিভক্ত পশ্চিম, মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ

প্রচ্ছদ » আন্তর্জাতিক » বিভক্ত পশ্চিম, মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ
শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫



---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥

যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করে ডোনাল্ড ট্রা¤প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইউক্রেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি যুদ্ধবিরতি চাইছেন। কিন্তু ইউক্রেন ও তাঁর ইউরোপের মিত্ররা চান নিশ্চয়তা, যা ভবিষ্যতে কিয়েভকে যে কোনো হামলা থেকে সুরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্র এ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। এ নিয়ে কার্যত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র বিভাজিত। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রা¤েপর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কির বাগ্বিত-ায় তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।

ট্রা¤প ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছেন। সম্প্রতি তিনি গোয়েন্দা সহায়তাও বন্ধ করেন। কিন্তু ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া সেই জেলেনস্কিকে বুকে টেনে নেন যুক্তরাজ্যের কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁ। তারা ইউক্রেনের নিরাপত্তাকে ইউরোপের নিরাপত্তা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। সেই সঙ্গে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। ইউরোপের নেতারা বলছেন, তারা ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে চান, যাতে নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষা দিতে পারেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বক্তব্য বিষয়টিকে আরও ¯পষ্ট করেছে। ইউরোপ যে আর যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না, বিষয়টি তার বক্তব্যে ফুটে ওঠে। পরমাণু শক্তিধর দেশটির নেতা গত বুধবার বলেন, তিনি তাঁর পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে মিত্র দেশগুলোকে সুরক্ষা দিতে চান। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে না থাকলেও’ তিনি ইউরোপকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। মাখোঁ বলেন, ‘আমাদের পরমাণু অস্ত্র আমাদের সুরক্ষা দেবে। এটা কেবল আমাদের প্রতিবেশীদেরই নয়, আরও অনেককে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।’

অবশ্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারগেই লাভরভ। তাঁর অভিযোগ, মাখোঁ সরাসরি রাশিয়াকে হুমকি দিচ্ছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রা¤েপর রাশিয়াপ্রীতি এবং ইউরোপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যায় গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তাঁর বক্তব্যে। প্রেসিডেন্ট হয়েই ট্রা¤প গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং ডেনমার্ককে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন। এর প্রতিবাদ এসেছে খোদ গ্রিনল্যান্ড থেকেই। আর ডেনমার্ক যখন এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাল তখন এটি পুরো ইউরোপের মর্যাদার ইস্যুতে পরিণত হলো। জার্মানি ও ফ্রান্স গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাবের প্রতিবাদ করল। এ কারণে গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রা¤েপর শপথ গ্রহণের পর পরই ইউরোপের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের। ইউক্রেন ইস্যুতে এ বিভাজন আরও ¯পষ্ট হয়েছে।

ইউরোপ এখন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিতে চাচ্ছে। এ নিয়ে বৃহ¯পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনও হয়। ওই সম্মেলনে নেতারা ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে একমত হন। ব্রাসেলস থেকে আলজাজিরার নাতাচা বাটলার জানান, ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিক পরিবর্তনের কারণে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে আসলেই আতঙ্ক দেখা গেছে। বৃহ¯পতিবার ওই সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপীয় কাউন্সিলেন প্রেসিডেন্ট এন্টোরিও কস্টা, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁসহ ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে জেলেনস্কিও ছিলেন। সম্মেলনে ইউক্রেনের সহায়তায় গঠিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’য়ে ২০টি দেশ সম্মতি জানায়। সেই সঙ্গে ভরসুলা ভন ডার লিয়েন ইউরোপের প্রতিরক্ষায় ৮০০ বিলিয়ন ইউরোপের একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন। ইউরোপ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন মহাদেশটির নেতারা। ব্রাসেলসের সম্মেলনে ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ইউরোপ এখন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

এ দ্বন্দ্বের মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভবিষ্যৎ। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক সংস্থা থেকে সরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এক সময় ন্যাটোও ছাড়তে পারে, এমন কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গত ৮০ বছর ধরে ন্যাটো পশ্চিমা দেশগুলোর ঐক্যের প্রতীক হয়ে সামনে এসেছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন যুদ্ধে এ জোট সক্রিয় ছিল।

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, পশ্চিম ইউরোপে বেশ কয়েকটি কনস্যুলেট বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বৃহ¯পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, জনবল কমানোর কারণে এসব কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে সংস্থাটি কি ইউরোপকে নিরাপত্তা দিতে পারবে? ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর র্স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) নির্বাহী পরিচালক বেন শিরার সিএনএনকে বলেন, যদি ইউরোপের দেশগুলো ঐকবদ্ধ থাকতে পারে, তাহলে তারা রাশিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি হতে পারবে। ইউরোপ একাই নিজেদের রক্ষার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের সে ইচ্ছা আছে কিনা।

আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো ড্যান ফ্রাইড বলেন, ওভাল অফিসে ট্রা¤েপর সঙ্গে জেলেনস্কির বাগ্বিত-া বড় বিভাজনকে তুলে ধরে। এটা কেবল যে ইউক্রেনের সঙ্গে এমনটা নয়, এটা যুক্তরাষ্ট্রেরই মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্নের বিরুদ্ধে, যা ট্রু থেকে রিগ্যান দেখেছিলেন।

সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা ও লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথম হাউসের সহকারী ফেলো জন লাফ বলেন, ‘দেখে মনে হলো যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে তাদের বন্ধুর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে। কেউ যদি একবার তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাহলে সে তা ভঙ্গ করতেই থাকে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৭:৪১   ৩০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


বিভক্ত পশ্চিম, মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ
সিরিয়ায় আসাদ অনুসারী ১৬২ বিদ্রোহীকে ‘হত্যা’র অভিযোগ
রাজনীতি থেকে বিদায়ের কথা জানালেন জাস্টিন ট্রুডো
ইসরাইলে একাধিক বাসে বিস্ফোরণ, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
৩ ইসরাইলির বিনিময়ে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি মুক্তির জন্য প্রস্তুত
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কী বললেন ট্রাম্প
গাজা নিয়ে হামাসের হুঁশিয়ারি
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী ইরানের
লেবাননে নতুন সরকার গঠনকে স্বাগত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের



আর্কাইভ