
: আরিফ আশরাফ :
রমজান মাসের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে খতমে তারাবি। তারাবি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়েছেন এবং তা যুগ যুগ ধরে মুসলিম সংস্কৃতিতে বিধান হিসেবে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ মাসে মুমিন বান্দা প্রচ- আগ্রহ নিয়ে বিনয়ের সঙ্গে তারাবি আদায় করে। হাফেজদের প্রচেষ্টায় এখন দেশের প্রায় সবখানে তারাবি অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ক’জন সেরা হাফেজের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কথা হল। হাফেজ মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন। বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবদুল হকের কাছে হিফজ সমাপন করেন। কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। এবার তিনি মাতুয়াইল দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে তারাবি পড়াচ্ছেন। হাফেজদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়ঃ
যুগান্তরÑ হাফেজদের প্রতি যতœ নেয়ার বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে কি?
হাফেজ সাজ্জাদ- পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর কালাম। কাজেই এর ধারক-বাহকরা আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত ও মর্যাদাশীল। তাদের সম্মান করা ও যতœ নেয়া প্রত্যেকের জন্য কর্তব্য। বিশেষ করে মসজিদ মুতাওয়াল্লি ও কমিটির ব্যক্তিরা তাদের খোঁজখবর নেবেন স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন-মনোরম থাকার ব্যবস্থা করবেন।
যুগান্তরÑ হাফেজদের বিষয়ে ক্ষমতাসীল সরকার কোন ভূমিকা রাখতে পারে কি?
হাফেজ সাজ্জাদ- হাফেজরা আমাদের দেশের জন্য সম্পদ এবং আল্লাহর রহমতস্বরূপ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সেমিনারে এ দেশের হাফেজরা বহুবার স্বর্ণপদক ও মুদ্রা অর্জন করেছেন। এতে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। কাজেই ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, হাফেজদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন ও প্রতিভা বিকাশে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
হাফেজ মুহাম্মদ বাইজিদ। গ্রামের বাড়ি বরিশাল, নবোগ্রাম। মুফাসসল থেকে উঠে আসা এক তরুণ হাফেজ। ২০০০ সালে বরিশাল খাজা মঈনুদ্দীন মাদ্রাসা থেকে পবিত্র কোরআন হেফজ সমাপ্ত করেন। এবার তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ পূর্বডগাইর আল মদিনা মসজিদে খতমে তারাবি পড়াচ্ছেন। কোরআনপ্রেমিক মুসল্লিরা তার মধুরকণ্ঠের তেলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হন। এবারকার তারাবির অনুভূতি জানতে তার সঙ্গে কিছুক্ষণঃ
যুগান্তরÑ এবারকার তারাবি আপনার কেমন মনে হচ্ছে?
হাফেজ বাইজিদ- ঢাকা শহরের মসজিদে এবারই আমি প্রথম তারাবি পড়াচ্ছি। কাজেই অনুভূতিটা একটু ভিন্নরকম, ভিন্ন স্বাদের। তারাবি পড়িয়ে আনন্দ লাগছে। ভয় ভয়ও করছে। সব মিলিয়ে এক বিশেষ আনন্দ ও রোমাঞ্চ অনুভব করছি।
যুগান্তরÑ আমরা মনে করি, হাফেজরা উদ্যোগ নিলে রমজানের ৩০ দিন মুসল্লিদের পবিত্র কোরআন শেখাতে পারেন। আপনিও কি আমাদের সঙ্গে একমত?
হাফেজ বাইজিদ, সুন্দর একটা প্রস্তাব। হতে পারে। তবে শুধু হাফেজদের ওপর ছেড়ে না দিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। এর পাশাপাশি মুসল্লিদেরও এ বিষয়ে প্রচ- আগ্রহী ও আন্তরিক হতে হবে।
চাষাঢ়া রেললাইন ক্রস করে একটু সামনে সরকারি গার্লস হাইস্কুল। পাশেই বাইতুস সালাম জামে মসজিদ। নারায়ণগঞ্জের এ মসজিদে খতমে তারাবি পড়াচ্ছেন হাফেজ মুহাম্মদ মুবাশ্বির। মাগুরায় বাড়ি তার। তিনি ২০০৪ সাল থেকে দেশের নামকরা কয়েকটি অভিজাত মসজিদে খতমে তারাবি পড়াচ্ছেন। তারাবি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হলঃ
যুগান্তরÑ খতমে তারাবিতে মুসল্লিদের আগ্রহ কেমন হওয়া উচিত?
হাফেজ মুবাশ্বিরÑ খতমে তারাবি হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তা রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত। ফলে এর ফজিলত ও সওয়াবের দিকটাও অধিক বটে। কারণ পবিত্র কোরআনের হরফ একটি বসে বসে পড়লে ৫০ নেকি পাওয়া যায়। আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে প্রতি অক্ষরে ১০০ নেকি পাওয়া যায়। পবিত্র রমজান মাসে তা ৭০ গুণে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০০০ নেকিতে পরিণত হয়। সুতরাং সচেতন কোন মুসলমান খতমে তারাবির এ মহান সওয়াব থেকে দূরে থাকতে পারেন না। প্রত্যেকেরই একাগ্রচিত্তে তারাবি আদায় করা উচিত।
(সংকলিত)
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৯:৩২ ১৯২ বার পঠিত