অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে উল্টো অর্থ কেলেঙ্কারির দায় চাপাচ্ছে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে

প্রচ্ছদ » অপরাধ » অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে উল্টো অর্থ কেলেঙ্কারির দায় চাপাচ্ছে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



---এইচ এ শরীফ, বোরহানউদ্দিন।।

ভোলার চরফ্যাশনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দুই সন্তানের জননীকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে চরফ্যাশন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও উত্তর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন কবির রাজনের বিরুদ্ধে। বিয়ের দীর্ঘদিন পেড়িয়ে গেলেও স্ত্রীর মর্যাদা না পেয়ে হুমায়ুন কবির রাজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

গত সোমবার (১০ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চরফ্যাশন পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মাস্টার মহল্লায় হুমায়ুন কবির রাজনের বাড়িতে ওঠেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

অভিযুক্ত রাজন চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া যুব ও ক্রীয়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন বলে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। অভিযোগ আছে মেজবাহ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তিনি নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

পুষ্প রাজনের বিষয় নিয়ে দেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ ঘটনায় অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির রাজন ও তার পরিবার বিষয়টি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে।

এ বিষয়ে পুরো জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ার পর পুস্প রাজনের ঘটনার সত্যতা জানতে অনুসন্ধান শুরু করে আজকের ভোলা। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আওয়ামী সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের (১৩অক্টোবর ) বোরহানউদ্দিন উপজেলার উত্তর বাসষ্টান্ডে পুস্প-রাজনের ভাড়া বাসায় পুস্পর প্রথম স্বামী আমান তাদের দুজনকে স্থানীয়দের সহায়তায় হাতেনাতে আটক করে। পরে স্থানীয়রা তাদের ওই বাসা থেকে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার জিম্মায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে রাজন তার সামাজিক অবস্থান ও আগের স্ত্রী, সন্তানের কথা তাদেরকে জানিয়ে রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে তাদের সহায়তায় মোটরসাইকেল যোগে ভোলার বাংলাবাজারে চলে যায়। বাংলাবাজার থেকে তার এক ঘনিষ্ঠবন্ধু তাকে রিসিভ করে জেলা শহরে নিয়ে যায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার উত্তর বাসষ্টান্ডে অবস্থিত সরোয়ার কমপ্লেক্স ভবনের মালিকের পুত্র। তিনি গনমাধ্যকে বলেন, ওইদিন রাজন ও পুস্পকে তার আগের স্বামী এখানে এসে আটক করলে আমাদের ভবনে অনেক হট্রগোল হয়। এরপর আমরা তাদেরকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিলে তারা আমাদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

ফ্লাটটির ভাড়াটিয়া পুস্পর চাচাতো বোন রুমা জানায়, আমার চাচাতো বোন আমাকে ফোন করে বলে আপু তোমরা ৩রুমের একটি বাসা নেও। আমাকে ও রাজন কে ১রুম সাবলেট দিও পরে আমি ওর কথামতো সরোয়ার কমপ্লেক্সের ৩রুমের এই বাসাটি ভাড়া নেই। পুস্প চিটাগাং থেকে আসতো আর রাজন চরফ্যাশন থেকে এসে থাকতো। ওরা ৩মাস আমার বাসায় সাবলেট হিসেবে ছিলো। আমান এসে যেদিন ঝামেলা করে এরপর বাড়িওয়ালা আমাদের বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেয় এরপর আমার স্বামীর পরামর্শে আমি ফ্লাটটি ছেড়ে দেই। এখন বর্তমানে স্বামীর সাথে ঢাকায় আছি।

সরোয়ার কমপ্লেক্সের নিচতলার মার্কেটের দোকানী ট্রান্সপোর্ট ব্যাবসায়ী জানান, রাজন ও পুস্প এই ভবনটির দোতলায় নওশাদ পাটোয়ারির ফ্লাটের একটি রুমে সাবলেট থাকতেন। রাজন প্রায়ই এই ভবনে আসতেন। তাকে আমরা স্যার নামে চিনতাম। ভবনে প্রবেশ করলে তিনি খুব একটা বেশি বেড় হতেননা।

পুস্পর প্রথম স্বামী আমান জানান, আমার স্ত্রী রাজনের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকেই রাজনের প্রলোভনে পরে আমাকে ডিভোর্স দেয়। আমি ডিভোর্স পেপারে সই করিনি। রাজনের সাথে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক আমি লোকমুখে শুনলেও বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। তাদের হাতেনাতে আটক করতে আমি বিভিন্ন লোক আমার স্ত্রীর পিছনে লাগিয়ে রাখি পরে আমি জানতে পারি রাজন ও পুস্প বোরহানউদ্দিনের উত্তর বাসষ্টান্ডের একটি ফ্লাটে আছে পরে আমি স্থানীয়দের সহায়তায় ১২ অক্টোবর দুপুর ৩:৩০মিনিটে ওই বাসায় প্রবেশ করে দেখি পুস্পর চাচাতো বোন রুমা আপাকে। রুমা আপাকে পুস্পর কথা জিজ্ঞেস করলে উনি বলে যে পুস্প বাসায় নেই পরে আমি ওর জুতা দেখে সনাক্ত করে বলি পুস্প বাসায় আছে। পরে আমি সহ স্থানীয়রা ওই বাসার একটি রুমে রাজন সহ পুস্প কে পাই। পরে আমি রাজনকে একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করে ছবি তুলতে চাইলে স্থানীয়রা ছবি তুলতে বাধা দেয়। সন্ধ্যার পর স্থানীয়রা রাজন ও পুস্প কে ওই বাসা থেকে বেড় করে স্থানীয় এক নেতার জিম্মায় নিয়ে যায়। এরপর রাজন সেখান থেকে সটকে পড়ে। পড়ে স্থানীয়রা পুস্প ও আমাকে নিয়ে বসে আমাদের কে ভাবার জন্য ৩মাসের সময় দেয়। চলতি বছরের ১০ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন গনমাধ্যমে দেখতে পাই আমার সাবেক স্ত্রী রাজনের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে। কিন্তুু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে হুমায়ূন কবির রাজন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গনমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আসছে আমি নাকি তার কাছ থেকে ৫লক্ষ্য টাকা নিয়েছি এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সে আমার সরলতার সুযোগে আমার সংসারটা ভেঙ্গে দিয়ে এখন বিভিন্ন রকমের মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি এই লম্পটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

এই ঘটনার প্রতক্ষদর্শী বোরহানউদ্দিন পৌর শ্রমিকদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নান্নু পাটোয়ারী এ বিষয়ে বরিশাল পোষ্টকে বলেন, পুস্প রাজনের এই বিষয়টি নিয়ে পুস্পর প্রথম স্বামী আমান উত্তর বাসষ্টান্ডে একটি ভাড়া বাসায় তাদের আটক করে। পরে উপজেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা আমাকে বিষয়টি অবগত করলে আমি তাদের উদ্ধার করে অন্যত্র রেখে আসি। সেখান থেকে রাজন সটকে পড়ে। পরবর্তীতে আমরা আমান ও পুস্পকে নিয়ে বসে তাদের দুটো সন্তানের কথা বিবেচনা করে সংসার করা যায় কিনা তা ভাবতে ৩মাসের সময় দেই। পরে এ বিষয়ে কি হয়েছে তা আমার জানানেই। রাজন পুস্প কে বোরহানউদ্দিনে আটক করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ তাদেরকে বোরহানউদ্দিনে আটক করা হয়েছিলো যার স্বাক্ষী আমি সহ এই এলাকার অনেকেই তখন এ ঘটনাটি দেখেছিলো।

এবিষয়ে অভিযুক্ত রাজনের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিক কে বলেন, আপনি কি সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৫:০০   ১১৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনের পল্লীতে বসত ঘরে চুরির পর আগুন
মনপুরায় বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত-১৫
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালসহ জনতার হাতে ৩ জন আটক
ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, পলাতক স্বামীসহ পরিবার
বাপ্তায় বাসুরের বিরুদ্ধে দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
বোরহানউদ্দিনে যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ভাংচুরের অভিযোগ
মনপুরায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতার জানাজা শেষে দাফন
ডেলিভারি করানোর সময় প্রসূতির ওপর নির্যাতন, নবজাতকের মৃত্যু
বাথরুমে ডেকে নিয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ
মনপুায় বাঁধে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় হামলা, ছাত্রদল নেতা নিহত



আর্কাইভ