দখল হয়ে যাচ্ছে ভোলার ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলাস্কুল পুকুর’

প্রচ্ছদ » অপরাধ » দখল হয়ে যাচ্ছে ভোলার ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলাস্কুল পুকুর’
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



---

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২০০ বছরের পুরনো সরকারি শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পুকুর (বাংলাস্কুল পুকুর)। এক সময়ে পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে ভোলা শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এখানো গোসল করতেন। শহরে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে এই পুকুরে পানি দিয়েই অগ্নিনির্বাপন করা হতো। কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি দখলদারদের কবলে পড়ে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পুকুর পাড়ের জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল পাকা ভবন। পুকুরটি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো কাজ হয়নি। প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পুকুরটি দখল অব্যাহত রেখেছে। এক সময়ে পুকুরটি আয়াতন ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে সেটি আছে ৭০ শতাংশ। কাগজে-কলমে ভরাট হয়েছে ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে বাস্তবে এটি আরো অনেক বেশী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুকুরের জমিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, চেম্বার অব কমার্সের কার্যালয় ও বাংলাদেশ রাইফেলস ক্লাব, স্কাউটস ভবন নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি ও সেলিম শপিং সেন্টার নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুকুর পাড়ের জমি ইজারা নিয়ে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এছাড়াও পুকুরের জমি দখল করে অবৈধভাবে ভোলা পৌর বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন ও বাংলাস্কুলের কর্মচারি থাকার জন্য ঘর নির্মান করা হয়েছে। বর্তমানে পুকুরের এক তৃতীয়াংশ দখল হয়ে গেছে।

ভোলা পৌরভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলা শহরের চর জংলা মৌজার ১৬৪নং খতিয়ানের ১১৪১ দাগে ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ জমিতে পুকুর। ১১৩২ ও ১১৪০ দাগে পুকুর পাড়ের জমি রয়েছে ৯দশমিক ৪০ শতাংশ। পুকুর আর জমি মিলে এক একর ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বর্তমানে কাগজপত্রে পুকুর রয়েছে ৭০ শতাংশ। সর্বশেষ পুকুরটি ভোলা টাউন কমিটি (বাংলাস্কুল) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। পাড়ের জমির সরকারি ইজারা হিসেবে পশ্চিম পাড়ে রয়েছে নজরুল ইসলাম গোলদার, শ্যামল দত্ত গং, সেলিম, নয়ন সেন। দক্ষিণ পাড়ে চেম্বার অব কমার্স, স্কাউটস অফিস, আওয়ামী লীগ অফিস, রাইফেলস ক্লাব, আবু তাহের। পূর্ব পাড়ে কোনো প্রকার ইজারা না নিয়ে ভোলা পৌর বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও বাংলস্কুলের কর্মচারীদের থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

২০২২ সালে পুকুরটি দখলমুক্ত করতে তৎকালিন জেলা প্রশাসক বরাবর স্থানীয় সচেতন মহল স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ভোলা পৌরসভার (শহরের মধ্যখানে) চরজংলা মৌজার শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পুকুর (বাংলাস্কুল পুকুর) ও জমি বর্তমানে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। এ মৌজার পুকুরটি দুই শতাধিক বছরের পুরোনো। স্থানীয় প্রশাসন পুকুরটি বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী ইজারা (লিজ) দিয়েছে। ইজারাগ্রহীতারা আইন উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করে দখল করছেন। পুকুরের আশপাশে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি ডিগ্রি কলেজ, একটি আয়ুর্বেদিক কলেজ ও একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে। পুকুরটিতে আগে দুইটি শানবাঁধানো ঘাট ছিল। একটি ঘাট দখল করে ভবন উঠেছে। এ পুকুরে এখনো বাজারের লোকজন গোসল করে, শিশুরা সাঁতার শেখে ও সাঁতার কাটে। শহরে অগ্নিকা- ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে পুকুরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অবস্থায় পুকুরটির সীমানা নির্ধারণ, দখলমুক্ত করা ও খনন জরুরি।

ভোলা জেলা সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি মো. মোবাশি^র উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভোলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি দখলমুক্ত ও সংরক্ষণের জন্য আমরা বিগত ১৫-২০ বছর ধরে আন্দেলন করে যাচ্ছি। পুকুরটি এক সময় অনেক বড় ছিলো। চারপাশ থেকে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি ভরাট করে দখল করেছে। ভরাট করার সময় প্রশাসনকে জানানো হলে প্রশাসন ভরাট করা সাময়িক বন্ধ করে। আবার রাতের আঁধারে ভরাট কার্যক্রম চলে। এইভাবে বিগত ১৫-২০বছর ধরে আস্তে আস্তে ভরাট করা হচ্ছে। এই পুকুরটি দখল উচ্ছেদ করে সংরক্ষণ করা জরুরী। কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছে, তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

---

তিনি আরো বলেন, ভোলা শহরে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে এই পুকুর অগ্নিনির্বাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের লোকজন এখানে গোসল করে। এই পুকুরটি ভোলা শহরের মানুষের জন্য অনেক উপকারী। গত ৫ আগস্টের পর এই পুকুরটি উদ্ধারে বর্তমান জেলা প্রশাসকের কাছে ১০ বার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রশাসনের লোকজনই ভূমি দস্যূদের সহায়ক শক্তি। আমরা চাই এই পুকুরটি দখল মুক্ত ও খনন করে সংরক্ষণ করা হোক।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, সরকারি পুকুর দখল করার কারো এখতিয়ার নেই। পুকুরটি দখলমুক্ত করতে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৪:৪৪   ১৬১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


তজুমদ্দিনের পল্লীতে বসত ঘরে চুরির পর আগুন
মনপুরায় বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত-১৫
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালসহ জনতার হাতে ৩ জন আটক
ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, পলাতক স্বামীসহ পরিবার
বাপ্তায় বাসুরের বিরুদ্ধে দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
বোরহানউদ্দিনে যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ভাংচুরের অভিযোগ
মনপুরায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতার জানাজা শেষে দাফন
ডেলিভারি করানোর সময় প্রসূতির ওপর নির্যাতন, নবজাতকের মৃত্যু
বাথরুমে ডেকে নিয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ
মনপুায় বাঁধে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় হামলা, ছাত্রদল নেতা নিহত



আর্কাইভ