চরফ্যাশনে তরমুজ চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনে তরমুজ চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



---

চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥

তরমুজ চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাষিরা। এ বছর অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ কিছুটা কম হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, তরমুজের ফলন আবহাওয়ার অনুকূল এবং প্রতিকূলতার উপর নির্ভর করে। তরমুজ চাষে ঝুঁকি থাকায় অনেক কৃষক বোরো ধানের চাষ করেছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় ড্রাগন, ড্রাগন সুপার, গ্লোরি, জাম্বু ও বাংলালিংক জাতের তরমুজ চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন ফলন হতে পারে। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টর প্রতি খরচ হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।’

কলমি ইউনিয়নের কৃষক জুলহাস বেপারি বলেন, ‘এ বছর ২৪০ শতাংশ জমিতে গ্লোরি ও জাম্বু জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কানি প্রতি ১৯ হাজার টাকা করে এক মৌসুমের জন্য লগ্নি নিয়েছি। আমি ১১ বছর ধরে তরমুজ চাষ করি। চারাগাছ রোপণ থেকে আজ পর্যন্ত কানি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ হাজার খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে দেড় মাস পর বিক্রি করতে পারব। সারের বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়।’

একই এলাকার আবদুল খালেক ৯৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর কিছুটা লাভ হয়েছে। এ বছর জমির পরিমাণ বাড়িয়েছি। সার্বক্ষণিক যতœ নেওয়া হয় তরমুজ গাছের। চৈত্র মাসের প্রথম দিকে তরমুজ পাকবে।’

তরমুজ চাষি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এ বছর দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তার মধ্যে ড্রাগন ও ড্রাগন সুপার জাতের তরমুজ চাষ করেছি এক একর জমিতে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের ফলন বেশি হলে লাভের মুখ দেখবে এই আশায়।’

একই এলাকার শ্রমিক মো. হোসেন বলেন, ‘তরমুজ চাষের জমি প্রস্তুত থেকে তরমুজ বিক্রি পর্যন্ত পরিচর্যার জন্য মাসিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন শ্রমিকরা। আমি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে তিন মাসের চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। থাকা খাওয়া তরমুজ চাষির। এই জমির পাশে টঙ ঘরে রাতে ঘুমাই, দিনে কাজ করি।’

জমির মালিকরা জানান, প্রতি কানি (১৬০ শতাংশ) জমি ১৯ থেকে ২৬ হাজার করে লগ্নি দিয়েছেন। যা গত বছর ছিলো ১৮ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। তরমুজ চাষের জন্য অনেক কৃষক গত বছর লগ্নির টাকা দিয়ে রেখেছেন।

কৃষি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিগত বছরে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনার আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাধারণত ১২ শতাংশ হারে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চরফ্যাশন সদর ব্রাঞ্চ থেকে ৯৯০ জন কৃষককে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ তরমুজ চাষি। জামানতে বর্গা চাষি কৃষকদের ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকি। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আমরা কৃষকদের ঋণ প্রদান করি।’

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ছানাউল্যাহ আজম বলেন, ‘এ উপজেলায় তরমুজের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকেছে। এ বছর তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৫৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। উপজেলার চর কলমি, নজরুলনগর, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নে তরমুজ চাষ বেশি হয়। বিগত দিনগুলোর থেকে এবছর তরমুজের আবাদের সাথে সাথে উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫১:৩৩   ১২৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


ভোলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মানে জিজেইউএস’র দোয়া ও ইফতার মাহফিল
ভোলায় এক্সিম ব্যাংকের উদ্যোগে আর্থিক সাক্ষরতা সপ্তাহ উদযাপন
ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলনে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকের
চরফ্যাশনের গ্রামে গ্রামে তরমুজ উৎসব
পোশাকে আঁকেন স্বপ্ন, পরিবারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা
ভোলার তৃষ্ণা ফাস্ট ফুডকে ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান
ভোলায় অগ্রণী ব্যাংকের উদ্যোগে আর্থিক স্বাক্ষরতা সপ্তাহ পালিত
লালমোহনে চরাঞ্চলে ‘তরমুজ বিপ্লব’
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকের চোখ ভরা স্বপ্ন
চরফ্যাশনে প্রান্তিক জেলেদের মাঝে ৫০টি বকনা বাছুর বিতরণ



আর্কাইভ