শিকারিদের দৌরাত্ম ॥ ‘হরিণের রাজ্য’ হরিণ নেই, কমেছে পর্যটক

প্রচ্ছদ » জেলা » শিকারিদের দৌরাত্ম ॥ ‘হরিণের রাজ্য’ হরিণ নেই, কমেছে পর্যটক
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



---

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

‘হরিণের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। হরিণ দেখতে প্রতিবছরই সারাদেশ থেকে এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা। তবে বর্তমানে কমে গেছে পর্যটকদের আগমন। এর কারণ এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না হরিণ। অবাধে শিকারের কারণে মনপুরায় হরিণ বিলুপ্তের পথে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে হরহামেশাই মনপুরা উপজেলায় মায়াবি হরিণের দেখা মিলতো। হাজিরহাট ইউনিয়নের জঙলার খাল, বদনার চর, চর সামছুদ্দিন, লতার চর, উত্তর সাকুচিয়ার আলম বাজার, দক্ষিণ সাকুচিয়ার রহমানপুর, কলাতলির চরের ঢালচর ও কলাতলি চরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাগানে ছিল হরিণের অবাধ বিচরণ।

শুধু বন নয়, রাস্তা ও মানুষের বসতবাড়ির উঠানেও ছুটে আসা হরিণের দেখা মিলতো। বেশ কয়েক বছর আগেও মনপুরা উপজেলার হরিণ নিজের চোখে একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ছুটে আসতেন বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা। কিন্তু বর্তমানের হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিলুপ্তির পথে বনের হরিণ। তাই কমে গেছে পর্যটকদের আসাও।

‘বাঘ’ ট্যাগে মারা পড়ছে ‘মেছোবিড়াল’

উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে আলম বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. কামাল ও মোসলেউদ্দিন জানান, ৬-৭ বছর আগেও তাদের বাজারের সামনের বনে প্রচুর পরিমাণ হরিণ ছিল। অনেক সময় হরিণ দলবেঁধে রাস্তায় চলে আসতো। রাস্তার এপাশ থেকে অন্যপাশে হরিণ দৌড়াদৌড়ি করতো। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসতো হরিণ দেখার জন্য। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ওই বাগানে হরিণ দেখা যায় না। এখন হরিণ আছে কি না তারা জানেন না।

মনপুরায় বিলুপ্তির পথে হরিণ

ঢাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে মনপুরায় ঘুরতে আসা পর্যটক ফারহাদ সর্দার ও ইউসুফ মিয়া জানান, তারা লোকমুখে মনপুরার হরিণের অনেক গল্প শুনেছেন। তাই এবার শীত মৌসুমে পরিবারের সদস্যরা মিলে দুদিনের জন্য মনপুরায় এসেছেন। ঘুরে ঘুরে মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। কিন্তু দুদিনেও তারা হরিণের দেখা পাননি। তাই নিরাশ হয়ে মুন্সিগঞ্জে ফিরে যাচ্ছেন।

কথা হয় উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈকত মাহমুদ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকমান হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘মনপুরা উপজেলার বনের হরিণ আজ বিলুপ্তের পথে। কারণ ৭-৮ বছর ধরে হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে গেছে।

প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠেছে মিনি চিড়িয়াখানা

তারা আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী নেতাদের বাড়িতে কোনো আত্মীয় এলে তারা হরিণের মাংস খাওয়াতেন। তখন বন থেকে শিকারিরা হরিণ শিকার করে তাদের জন্য নিয়ে যেতেন। এভাবেই হরিণ আজ মনপুরা থেকে বিলুপ্তে পথে।

মনপুরায় বিলুপ্তির পথে হরিণ

দক্ষিণ সাকুচিয়ার ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার মো. সবুজ বলেন, ‘হরিণ শিকারিদের সংখ্যা বেড়েছে। নদীভাঙনের ফলে হরিণের আবাসস্থল কমে যাচ্ছে, বন উজার হচ্ছে। এসব কারণে উপজেলায় হরিণ বিলুপ্তির পথে।’

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচার বন্ধ করতে হবে

এ বিষয়ে বন বিভাগের মনপুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান জানান, টহল কার্যক্রম চলমান। হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।

মনপুরায় বিলুপ্তির পথে হরিণ

মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির বলেন, মনপুরা থানা এলাকার চারদিকে অনেক বন আছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ বসবাস করে। বনের হরিণ রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৯:২৭   ১২৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জেলা’র আরও খবর


লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ॥ সেল কাউন্টারের অভাবে চরম দুর্ভোগ
মনপুরায় বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত-১৫
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালসহ জনতার হাতে ৩ জন আটক
ভোলায় মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম আউটসোসিং বাতিল করে রাজস্বকরণের দাবিতে শিক্ষকদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (কামরুজ্জামান) ভোলা সদর উপজেলার ইফতার মাহফিল
ভোলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সম্মানে জিজেইউএস’র দোয়া ও ইফতার মাহফিল
চরফ্যাশনে বাল্কহেডের ধাক্কায় মাছ ধরা নৌকা ডুবি, নিখোঁজ ১
ভোলায় মানবতার দুয়ারে ইফতার সামগ্রী বিতরণ
ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলনে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকের
ভোলার সাংবাদিকদের সম্মানে নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশনের ইফতার মাহফিল



আর্কাইভ