বিশেষ প্রতিনিধি ॥
গত ১৫ বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস করতেন আকতার হোসেন। অটোরিকশা চালিয়ে মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় করতেন তিনি। তার স্ত্রী, এক মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। তবে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছিল আকতারের জীবনের শেষ দিন। কারণ ওই দিন সকালে বাসা থেকে বের হন তিনি। বিকেলে স্থানীয়রা তার গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ নিয়ে যান স্ত্রীর কাছে। সকালেও যে স্বামী জীবিত ছিলেন, বিকেলে ওই স্বামীর নিথর দেহ দেখে শোকে মূর্ছা যান স্ত্রী আকলিমা বেগম, মুহূর্তেই যেন তার সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।
আকতার হোসেনের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কালমা এলাকায়। তিনি ওই এলাকার হমজুউদ্দিন বাড়ির বজলুর রহমান বেপারির ছেলে।
আকতারের স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতাম। তবে, গত ১৯ জুলাই সকালে আমার স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে সামনে যান। তখন আন্দোলনের কারণে এলাকা ছিল উত্তাল। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করতে থাকে। পুলিশের করা ৪টি গুলি লেগেছিল আমার স্বামীর শরীরে। আমার স্বামী সামান্য একজন রিকশাচালক ছিলেন। তার কী দোষ ছিল, কেন তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, এই হত্যার বিচার চাইবো কার কাছে? তবুও বর্তমান সরকারের কাছে আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তদন্তসাপেক্ষে তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমার অসহায় স্বামীকে তো ওরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তবে এখন চরম বিপাকে পড়েছি আমার ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে। দুই সন্তানের মধ্যে একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি, সেখান থেকে মাস শেষে মাত্র ৫ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে এবং খেয়ে তেমন আর টাকা থাকে না। তাই দুই সন্তানকেই আমার গ্রামের বাড়ি লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া এলাকায় বাবা-মায়ের কাছে রেখেছি। সেখানে মেয়ে একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে আর ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওরা তো এখনো নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না, তবে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমার এই সামান্য আয় দিয়ে কিভাবে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বো? তাই আমার দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। যাতে করে ওই অর্থ ভবিষ্যতে সন্তানদের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারি।
অন্যদিকে, ছোট ছোট দুই নাতি-নাতনির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দাদা মো. বজলুর রহমানও। তিনি বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় অটোরিকশা চালিয়ে কোনরকমে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতো। তবে আন্দোলনে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমার দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন পুত্রবধূ আকলিমা বেগম। আমি নিজে একজন দিনমজুর। তাদের যে সহযোগিতা করবো, সেজন্য আমারও নেই তেমন কোনো স¤পদ। তাই আমি সরকারের কাছে ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার কামনার পাশাপাশি তার রেখে যাওয়া দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে লালমোহনের ইউএনও মো. শাহ আজিজ বলেন, এই উপজেলায় আন্দোলনে যারা শহিদ এবং আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি খুব শিগগিরই সরকারিভাবে প্রত্যেক শহিদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের ১ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১:২৭:৫৪ ১২৭ বার পঠিত