আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
দেশে স্বল্পকালীন সামরিক আইন জারির ঘোষণার ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা স্থগিত করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে আজ শুক্রবার সিউলে তাঁর বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারে বাধা দেন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। তদন্তকারীরা বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা দলের সঙ্গে ৬ ঘণ্টার নানা নাটকীয়তার পর ইউন সুক-ইওলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা স্থগিত করেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। খবর- বিবিসি
ইউন সুক-ইওল-এর ‘আইনি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানকে’ দুঃখজনক মন্তব্য করে সামরিক আইন জারির ঘোষণার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘আমরা মনে করছি তাঁকে গ্রেপ্তার করা অসম্ভব। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সিউলের বাসভবনে নিরাপত্তা দলের কর্মীদের বাধার মুখে পড়ার পর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা বিবেচনায় ইউন সুক ইওলকে তার বাসভবনে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা থেকে তারা সরে আসেন। পরে ইউন সুক ইওলের বাসভবন ত্যাগ করেন।
ইউনের সমর্থকরা কয়েকদিন ধরে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে ক্যা¤প করে অবস্থান করছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের স্থগিতাদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গান ও নাচে উল্লাস করেছেন সমর্থকরা। ‘আমরা জিতেছি’ বলে তারা ¯ে¬াগান দিতে থাকেন।
ওয়ারেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেপ্তার করতে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তবে তারা নতুন ওয়ারেন্টের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং তাকে আবারও আটক করার চেষ্টা করতে পারেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি লি দায়ে হুয়ানসহ তদন্তকারী কর্মীরা কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে শুক্রবার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। ইওলের বাসভবনের ভেতরে থাকা সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের প্রতিহত করে। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাকর্মীরা এর আগেও ইওলের বাসভবনে পুলিশের প্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবন চত্বরে পুলিশের বেশ কয়েকটি বাস, কয়েক শ পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিউলের আদালত ইওলের বাসভবনে তল্লাশি চালানোর জন্য পরোয়ানা জারি করেছেন।
এর আগে সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েকদিনের মধ্যে তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অভিশংসিত ও পরে বরখাস্ত করা হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদন করেছে বলে দেশটির তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার সিদ্ধান্তের কারণে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে অভিশংসন এবং ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দ্য করাপশন ইনভেস্টিগেশন অফিস ফর দ্য হাই-র্যাঙ্কিং অফিশিয়ালস (সিআইও) নিশ্চিত করেছে, সামরিক আইন জারিকে কেন্দ্র করে তদন্তকারীদের অনুরোধে প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে সিউল ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমান কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো। দেশটির বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ সিআইওকে উদ্ধৃত করে বলেছে, বর্তমান এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এটি প্রয়োগ করা হলে ইউনকে সিউল ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:২০ ৩১ বার পঠিত