স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক বসতঘর নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে মাইনুদ্দিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পেশী শক্তি ব্যবহার করে ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যান। পুলিশ গিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘর নির্মান করায় কাজ বন্ধ করে দিলেও মাইনুদ্দিন কাজ পুনরায় চালিয়ে যান। তার কাছে আইন যেনো কিছুই না। ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চরআনন্দ পার্ট-১ নামক এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুস সহিদের ছেলে মাইনউদ্দিন হাওলাদার (৫২) এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মাইনউদ্দিন হাওলাদারের বর্তমান (নতুন) বসতঘর নির্মানের জমিটি বায়না ও ক্রয় সূত্রে মালিক পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা কবির হোসেন বেপারী। মমিন আলী হাওলাদারের ওয়ারিশগণ হতে ১৬৪নং খতিয়ানে ৩৭০নং দাগে খরিদ সূত্রে ৩ শতাংশ এবং একই খতিয়ান ও দাগে ওসিমন বিবি’র ওয়ারিশগণ থেকে ৬ শতাংশ মোট ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন মোঃ কবির বেপারী। মাইনউদ্দিন হাওলাদার তার ৭ শতাংশ জমির উপর পূর্বের ভিটা ও পুকুর রেখে জোরপূর্বক নতুন করে কবির বেপারীর ক্রয়কৃত জমির মধ্যে বর্তমানে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মাইনুদ্দিনকে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার ঘর নির্মাণে বাধা দিলেও তা তোয়াক্কা না করে মাইনুদ্দিন ঘর নির্মান কাজ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে জমির মালিক কবির হোসেন বাদী হয়ে ভোলার আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় মাইনউদ্দিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যার মামলা নং-৩৪২/২৪। উক্ত মামলা আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত বিরোধপূর্ণ জমিতে কোন ধরনের কাজ না করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু মাইনুদ্দিন আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী লোকজন ঝড়ো করে ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বসতঘর নির্মানের সময় মাইনউদ্দিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ইলিশা ফাঁড়ির পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসলে মাইনুদ্দিন ফের ঘর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যায়। মাইনুদ্দিন কোন আইনকেই তোয়াক্কা করছেন না। যার ফলে জমির মালিক কবির হোসেন তার জমি উদ্ধার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, জমিজমা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বিগত ২০১৪ সালে মাইনউদ্দিন হাওলাদারের ওয়ারিশগণের মধ্যে থেকে (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মাজেদ হাওলাদার, হাসনুর বেগম, ছালমা খাতুন, মাসুমা খাতুন, সুফিয়া খাতুন ও আকবর) ৭ ওয়ারিশের ৩০নং তৌজিভুক্ত জেএল ৩৭নং চর মৌজা চর আনন্দের এসএ ৯৯নং খতিয়ানের ৩১৩নং দাগের ৫৩ শতাংশ ও এসএ ১৬৪নং খতিয়ানে ৩৭০নং দাগে ২৯ শতাংশ, এছাড়াও এসএ ১০১নং খতিয়ানে ৩১৪, ৩১৫নং দাগে ২ শতাংশসহ মোট ৮৪ শতাংশ জমি বায়না সূত্রে মালিক হিসেবে দখলে আছেন কবির হোসেন বেপারি। তখনকার বায়নাকৃত জমির রেকর্ডে ত্রুটি থাকায় ওয়ারিশগণ বিক্রিত জমির দলিল দিতে না পাড়ায় ৩’শ টাকার স্ট্যা¤েপ বায়না চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ও তাদের এনআইডি ফটোকপি, স্ট্যাম্প সাইজ ছবি, মূল দলিল, বিএস রেকর্ডের কাগজপত্র ও জমির দখলসহ কবির বেপারীকে বুজিয়ে দেন। পরে বিএস রেকর্ডের ত্রুটি সমস্যা সমাধান করে আসলে বিক্রেতাগণ কবির হোসেনকে দলিল দিবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু বিএস জরিপ রেকর্ড সংশোধন হয়ে আসার পর কবির হোসেন দলিলের জন্য গেলে বিক্রেতাগণ বিভিন্ন তালবাহান শুরু করেন এবং সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দেন। বর্তমানে কিছু কুচক্রী মহলের ইন্ধনে জমির দলিল দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ করলেও বিক্রিত জমির দলিল দিতে গড়িমসি করছেন বিক্রেতাগণ।
ভূক্তভোগী কবির হোসেন বেপারী বলেন, আমি ২০১৪ সালে মাইনুদ্দিনের ওয়ারিশগণের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে বায়না চুক্তি করে জমি ক্রয় করে ভোগদখলে আছি। জমির রেকর্ডে কিছু সমস্যা থাকায় তখন দলিল দিতে পারেননি তারা। আমি অনেক টাকা পায়সা খরচ করে রেকর্ড ঠিক করেছি। এখন তারা আমাকে বিভিন্ন কুচক্রী মহলের ইন্ধনে পরে দলিল দিতে তালবাহানা করছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে ও হয়রানী করে আসছে। আমি যাতে ক্রয়কৃত জমির দলিল পেতে পারি সে জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি। এছাড়াও মাইনুদ্দিন আমার ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ঘর নির্মান করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাইনুদ্দিন তা মানছেন না। আমি ওই জমি উদ্ধারেও প্রশাসনের সহযোগীতা চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাইনউদ্দিন হাওলাদারের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের ৭ ওয়ারিশগন কবির হোসেন বেপারীর কাছে ৮৪ শতাংশ জমি ২০১৪ সালে স্টাম্পে স্বাক্ষর করে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা বায়না নিয়েছেন সত্য। তবে আমি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ০৭ শতাংশ জমি বিক্রি করিনি। বিএস জরিপ ও নামজারি আমার নামে করে বর্তমানে সেই জমিতে বসতঘর করে দখলে আছি। এছাড়াও তিনি জানান, আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এসকল মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করে আসছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪২:০২ ৭৩ বার পঠিত