
লালমোহন প্রতিনিধি ॥
প্রায় ৬৩ বছরের বৃদ্ধ শাহে আলম। অন্ধ এক চোখ, শরীরেও নানা রোগ। একটু বেশি হাঁটলেই ঘুরতে থাকে মাথা। দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ঘরে। তখন প্রতিবেশী এবং স্বজনরা সহযোগিতা দিয়ে তার পরিবার চালাতে সাহায্য করেছেন। এখন কিছুটা সুস্থ বৃদ্ধ শাহে আলম। তবে বয়সের দোহাই দিয়ে ঘরে বসে থাকার সময় নেই তার। তাইতো পেটের তাগিদে বাজারে হেঁটে হেঁটে বিক্রি শুরু করেছেন আমড়া এবং শসা কেটে মরিচ মাখিয়ে বিক্রি।
বৃদ্ধ শাহে আলমের স¤পদ বলতে কিছুই নেই। শ্বশুর থেকে পাওয়া স্ত্রীর সামান্য পরিমাণ জমিতে এখন ঘর তুলে থাকেন তিনি। বৃদ্ধ শাহে আলম ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা।
বৃদ্ধ শাহে আলম বলেন, আমি খুবই অসহায়। নিজের তেমন কোনো স¤পত্তি নেই। স্ত্রী থেকে পাওয়া জমিতে ঘর তুলে থাকছি। ওই ঘরটির ওপর সম্প্রতি এক ঘূর্ণিঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে ভেঙে গেছে। এছাড়া ঘরের অন্যান্য স্থানের টিনগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। টাকার জন্য ঘরটিও মেরামত করতে পারছি না। ঝড়ে ঘর ভাঙলেও পাইনি কোনো সহযোগিতা।
তিনি আরো বলেন, আমার এক চোখ অন্ধ। আবার বয়স হয়েছে অনেক, শরীরেও বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। প্রতিবেশী আর স্বজনরা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা দেন। তা দিয়েই কোনো রকমে চলেছি। তবে তারা আর কত দেবেন? এ জন্যই এখন লালমোহন বাজারে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন দোকানে এবং পথচারীদের কাছে আমড়া এবং শসা কেটে মরিচ মাখিয়ে বিক্রি করি। এতে করে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ টাকার মতো আমড়া-শসা বিক্রি করতে পারি। এরমধ্যে দেড়শ’ টাকার মতো লাভ হয়। এ দিয়েই সংসারের জন্য কেনাকাটা করি।
শাহে আলম বলেন, সংসারে বয়স্ক স্ত্রী, তালাকপ্রাপ্ত এক মেয়ে, পুত্রবধূ এবং তিন নাতি-নাতনি রয়েছে। ছেলে ঢাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। সেখানেও তেমন বেশি বেতন পায় না, যা বেতন পায় নিজের সংসার চালানোর পর তবুও আমাদের কিছু টাকা দেয়। তা দিয়েও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই নিজের কষ্টের কথা জেনেও এই আমড়া এবং শসা বিক্রির পথ বেছে নিই।
এই বৃদ্ধ আরো বলেন, আমার যেহেতু এক চোখ অন্ধ, সেজন্য আমি একটি প্রতিবন্ধী ভাতা এবং আমার ভাঙা ঘরটি মেরামতের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। এসব সহযোগিতা পেলে হয়তো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু ভালোভাবে থাকতে পারবো।
উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজান পালোয়ান বলেন, বৃদ্ধ শাহে আলম সত্যিই খুব অসহায়। আবার ঝড়ে তার ঘরটিও ভেঙে গেছে। ওই সময় স্থানীয় চৌকিদারকে দিয়ে ওই বৃদ্ধের ঘরের তালিকাটি ইউএনও অফিসে দিয়েছি। এছাড়া মাঝে-মধ্যে তাকে ব্যক্তিগতভাবে সাধ্যমতো সহযোগিতা করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওই বৃদ্ধ আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে ঘর মেরামতের জন্য সহযোগিতা এবং তাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১:১৪:১২ ৩৬৯ বার পঠিত