বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

কুকরী-মুকরীর বাকে বাকে সুন্দরবন

প্রচ্ছদ » চরফ্যাশন » কুকরী-মুকরীর বাকে বাকে সুন্দরবন
শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮



---
ছোটন সাহা ॥
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষা প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দ্বীপ জনপদ কুকরী-মুকরী। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিনের সাগর মোহনার এ জনপদে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বেষ্টুনী। বাহারি প্রজাতির গাছপালা আর জীববৈচিত্রের সমারোহ যেন মন কেড়ে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের। দখিনা জনপদের কাছে এটি এখন পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। নানা প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যরে কারনেই কুকরী-মুকরীর বাকে বাকে যেন সুন্দরবনের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা হয়। সে কারনেই দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসাবে গড়ে উঠতে পারে কুকরী-মুকরী।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, চর দিঘল, চর জমির, চর সুফী, চর আলীম, চর পাতিলা ও কুকরী-মুকরী নিয়ে কুকরী-মুকরী রেঞ্জ। ৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর এলাকায় রয়েছে কেওড়া, গোলপাতা, সুন্দরী, কাকড়া, গেওয়া, বাইন, রেইন্ট্রি, আকাশমনি ও মেহগনির বৃক্ষের সমারোহ। যেখানে জীবিত গাছের সংখ্যাই প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে এখানে একের পর এক স্থাপনা গড়ে উঠছে। ইতমধ্যে পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন হয়েছে। নির্মান করা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক টুরিষ্ট হোটেল।
দর্শনীয় স্থান হিসাবে রয়েছে নারিকেল বাগান, বালুর ধুম, লাল কাকড়া, সাগর পাড়ে প্রকৃতিকভাবে গড়ে উঠা সি-বীজ ও সাগরের গর্জন। নারিকেল বাগানের কাছে বন বিভাগ পর্যটকদের জন্য চেয়ার স্থাপন করেছে, সেখানে বসেই সাগরের উত্তাল ঢেউ ও অতিথি পাখি দেখা যাবে। এছাড়াও কুকরী বিভিন্ন বাকে বাকে সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যাবে।
৭০- এর বন্যায় বেশীরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ছিলো দক্ষিণাঞ্চলের এই ছোট দ্বীপ কুকরী-মুকরীতে। সাগরের কোল ঘেষা এ দ্বীপে ১৯৭৩ সালে বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ধীরে ধীরে সেখানে সবুজের বেস্টুনি গড়ে উঠেছে। ঝড়-জলোচ্ছাসসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেয়ে আসছে কুকরী-মুকরীর ১৮ হাজার মানুষ। সিডর ও আইলায় কুকরী-মুকরীর মানুষ রক্ষিত ছিলো।
কুকরী-মুকরীর বাসিন্দরা জানান, দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বিশেষ করে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন মানুষ। এখানে পিকনিকসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যোগাযোগ, থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বিরম্বনায় পড়তে মানুষ ভ্রমন পিপাসুদের।
কুকরীর বাসিন্দা সাগর ও রমিজ উদ্দিন বলেন, কুকরী-মুকরী অনেকটা সুন্দরবনের মতই দেখতে, বাহারি প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্য নজর কাড়ে মানুষের।
ঘুরতে আসা মাকসুদ, অলক, নাজিম ও রাশেদ বলেন, কুকরী-সৌন্দর্য্যরে কথা আগে শুনেছি, তবে আসা হয়নি, এখন এখানে এসেই মুগ্ধ হলাম। কি নেই এখানে, সব কিছুই যেন সুন্দরবনের মতই।
কিছুদিন আগে কুকরী-মুকরী রেষ্ট হাউজ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়াও হরিন প্রজনন কেন্দ্র হচ্ছে। এ মাসের ২৫ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এ সময় বন ও পরিবেশে উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উপস্থিত ছিলেন। খুব শিগ্রই এসব স্থাপনা হলে কুকরী-মুকরী আরো বেশী আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজন বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন এড়িয়ার মধ্যে কুকরী-মুকরী একটি নান্দনিক সৌন্দর্য্যরে স্পট। যা পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন কিন্তু তারা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেনা। তাই এখানে আরো হোটেল, মোটেল, রিসোটসহ নানা স্থাপনা নির্মানের দাবী জানাচ্ছি, যাতে করে পর্যটকরা ঘুরতে এসে বিরম্বনার মধ্যে না পরে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগ কুকরী-মুকরী রেঞ্জের বিট অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, কুকরী-মুকরী সুন্দরবনের মতই এখানে হরিন, বানর, ভাল্লুকসহ নানা প্রজাতির বৈচিত্রময় প্রানী ও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে। শুধু সুপেয় পানি, খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থার স্বল্পনা রয়েছে, বন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি টুরিস্ট হোটেল নির্মান করেছে। এখন শুধু যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নয়ন হলেই দেশের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে কুকরী-মুকরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩০:৪৬   ১৭৯৩ বার পঠিত