
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার পরানগঞ্জস্থ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিস অন্যত্র সরিয়ে না নিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ভোলার বিজ্ঞ আদালত। গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞ আদালত পল্লীবিদ্যুতের জোনাল অফিসটি পরানগঞ্জ থেকে সরিয়ে না নেওয়ার জন্য এই আদেশ দেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই শাখায় কর্মরত ডিজিএম আশিকুল ইসলাম আদালতের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশের নোটিশ গ্রহণ না করে অফিসের মালামাল নতুন অফিসে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় গ্রাহকদের বাধার মুখে ব্যর্থ হন। বিজ্ঞ আদালতের পবিত্র আদেশ অমান্য করে অফিসের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় ডিজিএম আশিকুল ইসলামকে শোকজ করেছে আদালত।
সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে উত্তর ভোলার গ্রাহকদের সেবার সুবিধার জন্য পরানগঞ্জ বাজারে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস স্থাপন করা হয়। পরানগঞ্জ বাজারে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস হওয়ায় পূর্ব ইলিশা, পশ্চিম ইলিশা, রাজাপুর, কাচিয়া, বাপ্তা, ধনিয়া, আলিমাবাদ, শ্রীপুর ইউনিয়নের গ্রাহকরা সহজেই সেবা নিতে পারেন। গত দুই বছর ধরে পল্লীবিদ্যুৎ পরানগঞ্জ জোনাল অফিসে ডিজিএম আশিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর অফিসটি বাপ্তা ভোটের ঘর পুলিশের দোকান এলাকায় একটি ভবনে স্থানান্তর করার জন্য ষড়যন্ত্র করে। নতুন যে ভবনে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসটি নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেই ভবনের মালিক ডিজিএম আশিকুল ইসলামের খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে সেখানে অফিস নেওয়ার পায়তারা করে আসছিলেন। কিন্তু বাপ্তা ভোটের ঘর পুলিশের দোকান এলাকায় যে ভবনে অফিস নেওয়ার পায়তারা করা হচ্ছিলো সে ভবনে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ লাইন আওতাভুক্ত।
ডিজিএম আশিকুল ইসলাম ষড়যন্ত্র করে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে এই খবর পেয়ে স্থানীয় গস্খাহকরা পরানগঞ্জ বাজারে অফিস রাখার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এছাড়াও ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ এমপি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী, পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
ভোলার মানুষের অভিভাবক সাবেক শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি জনগণের স্বার্থে পরানগঞ্জ বাজারে বর্তমান স্থানে পল্লীবিদ্যুতের জোনাল অফিসটি বহাল রাখার জন্য পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ডিও লেটার দিয়েছেন। তারপরও এই বর্ষিয়ান নেতার সুপারিশকে উপেক্ষা করে ডিজিএম আশিকুল ইসলাম পরানগঞ্জ জোনাল অফিসটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছেন।
গ্রাহকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ডিজিএম শফিকুল ইসলাম অফিস সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলমান রাখে। জনগণের সেবার কথা চিন্তা করে অফিসটি বর্তমান স্থানে পরানগঞ্জ বাজারে রাখার দাবীতে ভোলা সদর সিনিয়র জজ আদালতে বিল্লাল হোসেন লিটন মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর উক্ত মামলার শুনানীকালে প্রস্তাবিত স্থানটি বাদী পক্ষ ওজোপাডিকোর এরিয়া বলে উল্লেখ করেন। ডিজিএম আশিকুল ইসলাম আদালতকে এরিয়াটি পল্লীবিদ্যুতের বলে দাবী করেন। এই বিষয়টি আদালত তদন্তের নির্দেশ দিলে বিবাদীপক্ষ (পল্লীবিদ্যুৎ) স্থানীয় তদন্তের আবেদন না করে উক্ত ভবনে পল্লীবিদ্যুতের নতুন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেন।
অতিদ্রুত লাইন লাগানোর জন্য একাধিক বৈদ্যুতিক খুটি এবং ট্রান্সফার্মার ওই ভবনের সামনে স্থাপন করেন। রাতের আধারে ওই ভবনে অনুমোদনহীন দুটি মিটার লাগানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিজিএম আশিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে নতুন লাইন স্থাপনের কাজ চলমান দেখতে পান। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে প্রথমে ছবি তুলতে বাঁধা দেন এবং পরে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সটকে পড়েন। তিনি একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে প্রমানিত হয়।
গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ওই মামলার শুনানী হলে বিজ্ঞ আদালত পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিস পরানগঞ্জ বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার উপর স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। আদালতের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশের নোটিশ ডিজিএম আশিকুল ইসলামের কাছে নেওয়া হলে তিনি সেটি রিসিভ করেননি। উল্টো আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অফিসের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় গ্রাহকরা খবর পেয়ে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে এসে ঝড়ো হয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে এতে বাঁধা দেয়।
বিজ্ঞ আদালতের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশের নোটিশ গ্রহণ না করায় এবং অফিসের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় ডিজিএম আশিকুল ইসলামকে বিজ্ঞ আদালত শোকজ করে।
তবে নির্ভারযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞ আদালতের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশকে উপেক্ষা করে ডিজিএম আশিকুল ইসলাম অফিস থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে যাতে মালামাল সরিয়ে নিতে পারেন সে জন্য তিনি অফিসের বেশ কিছু মালামাল বস্তা ভর্তি এবং অন্যান্য মালামাল প্রস্তুত করে রাখেন। আদালতের স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার আদেশকে উপেক্ষা করে জিডিএম আশিকুল ইসলাম পরানগঞ্জ পল্লীবিদ্যুত অফিস থেকে যাতে মালামাল সরিয়ে নিতে না পারে সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৩:৫১ ২৪০ বার পঠিত