আওলাদ হোসেন, দৌলতখান ॥
“মানুষ হতে মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়। তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়”- কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
দৌলতখানের মানুষের কাছে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম আমেনা ফাহিম। আমেনা ফাহিম একাধারে একজন কবি, সাহিত্যক, গীতিকার ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে সমধিক পরিচিত। আমিনা ফাহিম প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য।
কবি ও শিক্ষক আমেনা ফাহিম এর জন্ম বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপজেলা ভোলার দৌলতখান উপজেলায়। বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম এবং মায়ের নাম জাকিয়া বেগম।
তিন বোন আর দুই ভাই এই পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমেনা ফাহিম প্রথম। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিপ্রেমী পরিবারে তার বেড়ে ওঠা।মা বাবা দু’জনেই তাকে সকল কাজে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়েছেন।
দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, দৌলতখান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন ২০০৪ সালে। ভোলার দৌলতখান সরকারি আবি আবদুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন ২০০৬ সালে। এইচএসসি পাশের পর মামা মোশাররফ হোসেন সেলিমের সাথে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যান চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে অনার্স করে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে মাষ্টার্স সম্পন্ন করেন।পরে বিএড ও ডিপিএড প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। দক্ষতা ও সুনামের সাথে বর্তমানে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
চাকুরির পূর্বে ঢাকায় শেল এন্ড কার্নেল নামক একটি সফটওয়্যার কো¤পানিতে প্রায় দু’বছর কন্টেন্ট ডেভেলাপার হিসেবে কাজ করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় টানা দশ বছর পর তিনি ঢাকা থেকে স্থায়ীভাবে দৌলতখানে মিঝি বাড়িতে নিজস্ব বাসভবনে বসবাস শুরু করেন। স্বামী বশির মিঝি তার সকল কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
আমেনা ফাহিম একজন করোনাযোদ্ধা শিক্ষক।দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে শিক্ষার আলো ডট.কম আয়োজিত করোনাযোদ্ধা শিক্ষক মিলনমেলায় নির্বাচিত শিক্ষক হিসেবে ভোলা থেকে দিনাজপুর গিয়েছিলেন। সেখানে ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষকগ্রুপের সাথে পরিচিতি এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।
শৈশব থেকেই আমেনা ফাহিম লেখালেখি করতেন। ২০১৫ সালের দিকে তার শুভাকাক্সক্ষীদের অনুপ্রেরণায় তার লেখা প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। এরপর থেকে সাহিত্যাঙ্গনে পথচলা বিরামহীন।অনেক সাহিত্য গ্রুপ সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্যে তাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
দেশে বিদেশের অসংখ্য অনলাইন এবং জাতীয় পত্রিকা গুলোতে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
কলকাতার বই মেলায় হার্টবিটে কবিতার আনাগোনা নামক একটি যৌথকাব্যে তার ‘ভালোবাসি’ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালেও কলকাতা বই মেলায় হার্টবিটে কবিতার আনাগোনা ২ বইতে তার আরও একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়া অসংখ্য যৌথ কাব্য এবং ম্যাগাজিনে তার প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ এ প্রকাশিত হয়েছে আমেনা ফাহিম-এর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ ‘গোধূলীর আত্মকথন’। বইটিতে ৪৭ টি কবিতা রয়েছে। কবিতায় প্রকৃতি, প্রেম, দেশাত্মবোধ, সমসাময়িক এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রচিত লেখাগুলো স্থান পেয়েছে। ইতিমধ্যে বইটি পাঠক মহলে স্থান করে নিয়েছে।
বর্তমানে তিনি দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। সৌভাগ্যের বিষয় হলো তিনি এই বিদ্যালয়ের একদিন ছাত্রী ছিলেন। আজ তিনি সেই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। সব চেয়ে ভালো আলোচনার বিষয় এই আমিনা ফাহিম পর পর দুই বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
চমৎকার এই লেখকের দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ ‘অন্তদর্শন’ কলকাতায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এই সাফল্যের কথা জানতে চাইলে আমেনা ফাহিম আজকের ভোলাকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, দ্বিতীয় বার এর মতো দৌলতখান উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পদক বাছাই কমিটির প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা নির্বাচিত হলাম। শ্রেষ্ঠত্ব ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখাও কঠিন ব্যাপার, আলহামদুলিল্লাহ।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমাকে নির্বাচন করার জন্য। আমার বিদ্যালয়সহ দৌলতখানের অসংখ্য শিক্ষক রয়েছেন যারা এই সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। তবুও আমাকে নির্বাচন করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি সকলের কাছে বিনম্র চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি ওদের ভালোবাসা ছাড়া আমি একদমই শূন্য। ওদের জন্যই আমার আজকের এই সম্মান।
আমার কাছে শ্রেষ্ঠত্বের বিশেষ কোনো অর্থ নেই, কবিতায় লিখেছিলাম আমি আর শ্রেষ্ঠ হতে চাইনা। আমি কর্মে বিশ্বাসী, যতদিন বাঁচব ভালো কাজ করে যাবো। আমার সাথে সাথে আমার শ্রেষ্ঠত্ব একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ভালো কাজগুলো পৃথিবী মনে রাখবে হাজার বছর। কাজের সম্মাননা নতুন কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়, সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই প্রতিটি সম্মান আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বাড়িয়ে দেয়। আমার জন্য সকলে দোয়া রাখবেন আমি যেনো একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন লেখক হিসেবে এবং আমার প্রতিটি সত্তায় নিজেকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি আমাকে সম্মানিত করেছেন। কৃতজ্ঞতা অশেষ আমার প্রধান শিক্ষক জনাব মহিবুর রহমান স্যার এর প্রতি, স্যার এর অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতার কারনেই আজ আমি সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। কৃতজ্ঞতা আমার সকল সহকর্মীদের প্রতি, সকলেই আমাকে নানারকম পরামর্শ এবং প্রস্তুতি নিতে সহযোগিতা করেছেন। আমি সত্যি ভীষণ গর্বিত দৌলতখান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হতে পেরে। একদিন এই বিদ্যালয়েরই আমি শিক্ষার্থী ছিলাম, আজ আমি শিক্ষক।
কৃতজ্ঞতা আমার সকল শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি যারা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে আমার সকল কাজে শক্তি হয়ে পাশে থাকেন। আমার মা চেয়েছিলেন আমি প্রাথমিকের শিক্ষক হই, আমার মনে হয় মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। আমার এই সম্মান উৎসর্গ করছি আমার বাবা মা কে, যারা আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৩:১৭ ৫২১ বার পঠিত