স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পরিষদের একজন কর্মচারী হয়েও ইয়াজ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে পর্যন্ত লাঞ্ছিত করতে পিছপা হননি। তার দাম্ভিকতা এতোটা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মনপুরাবাসীর কাছে এখন তিনি রীতিমত এক মূর্তমান আতঙ্কের নাম। কখন কাকে কোন অজুহাতে অপমান অপদস্থ করেন, এমন আতঙ্কে রয়েছেন মনপুরাবাসী। তার বিচার চেয়ে ভোলার জেলা প্রশাসক, উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও একাধিক অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে খোদ ইউপি সদস্যই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সচিবের খুঁটির জোর এতোই বেশি যে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের দাবী মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আমানত উল্লাহ আলমগীর এবং হাজিরহাটের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার নানা তদবিরের মাধ্যমে ওই সচিবকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সুরক্ষা দিয়ে আসছেন। বিনিময় সচিব ইয়াজ উদ্দিনকে ব্যবহার করে নানা দূর্নীতি করে যাচ্ছেন ওই দুই চেয়ারম্যান। তবে আশার আলো হচ্ছে এই যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচিব ইয়াজউদ্দিনের দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও সচিবের দুর্নীতি তদন্ত শুরু করছেন আজ (শনিবার)। মনপুরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান মনপুরার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। আজ তিনি ইয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্তের জন্য উভয়পক্ষকে নোটিশ করেছেন। তবে এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
গত ২১ মে হাজিরহাট ইউনিয়নের মোঃ তছলিম মেম্বার ও বাছেত মেম্বার সরাসরি ভোলার জেলা প্রশাসকের কাছে সচিব ইয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে হাজিরহাটের জনৈক বাবুল মোল্লাও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্থ করেছেন জেলা প্রশাসক।
অভিযোগকারীদের দাবী, ইয়াজ উদ্দিন মূলত মনপুরা ইউপির সচিব। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করছেন হাজিরহাট ইউনিয়নের। মনপুরা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের দুটিরই সচিব তিনি। ফলে ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছেন তিনি। জন্ম নিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদসহ ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকে তিনি নগদ টাকা নিয়ে থাকেন। জেলে এবং দুস্থ নারীদের চাল, টিসিবির ফ্যামিলী কার্ডসহ সরকারী বরাদ্দগুলো চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগসাজস করে আত্মসাৎ করেন। হাজিরহাট ইউনিয়নের বাবুল মোল্লা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি যার স্ত্রীর নামে ২০২১-২২ সালের ২৪ মাসের জন্য ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু তাকে দিয়েছেন মাত্র ৫ মাসের চাল। বাকী ১৯ মাসের চাল তিনি এবং চেয়ারম্যান মিলে আত্মসাৎ করেছেন। এর আগে নদী ভাঙনকবলিত মানুষদের জন্য সরকারী সহায়তার টাকা এবং সোলার বাতি বরাদ্দ ও গভীর নলকূপ বরাদ্দের টাকাও নয়-ছয় করেছেন ওই সচিব। এসব বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত তাকে বরখাস্তের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তা না হলে মনপুরা ও হাজিরহাটের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
হাজিরহাট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ তছলিম জানান, দুস্থ নারীদের নামে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে অনেক ধর্ণাঢ্য এবং পাওয়ার যোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তালিকাটি মেম্বারদের দেখানো হচ্ছে না। তিনি দেখতে চাইলে সচিব বলেন, পরিষদের নোটিশ বোর্ডে টানানো আছে। কিন্তু ৮শ’ ৮জন নারীর তালিকা থাকার কথা থাকলেও নোটিশ বোর্ডে আছে ৫শত জনের। বাকী ৩শত জনই হচ্ছে সচিব এবং চেয়ারম্যানের পছন্দের ব্যক্তি। ওই ৩শ’ জনের নামসহ তালিকা চাইতে গেলে গত ১৭ মে-২০২৩ সচিব ইয়াজ উদ্দিন ইউপি সদস্য তছলিমকে লাঞ্ছিত করেন। এর আগে জেলেদের চালের বিষয়ে জানতে চাইলে ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন, ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আবদুল হালিম ও ফারুক মেম্বার এবং মহিলা মেম্বারদের সাথেও দুর্ব্যবহার করেন সচিব। একজন সচিব হয়ে পরিষদের একজন সদস্যকে এভাবে লাঞ্ছিত করায় অন্যান্যদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাস্তান টাইপের এমন সচিবের কবল থেকে মনপুরা ও হাজির হাটের মানুষদের রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের কয়েকজন জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে সচিব ইয়াজ উদ্দিন জানান, তছলিম মেম্বার তালিকা চাইলে আমি তাকে পরে দিবো বলেছিলাম। মেম্বার বারবার তালিকা চান। এক পর্যায়ে আমি বলেছি নোটিশ বোর্ডে আছে। এতে মেম্বার উত্তেজিত হয়ে যান। এ বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু মেম্বারকে লাঞ্ছিতের কোন ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি পরিষদ প্রধান নই, যা কিছু হয় পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের নির্দেশেই হয়। এ ব্যাপারে আমার একক কোন ক্ষমতাও নেই, দুর্নীতির সুযোগও নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০:১০:৪১ ৪৫৯ বার পঠিত