ঝড়ের সংকেত বোঝেন না চরফ্যাশনের চরের মানুষ

প্রচ্ছদ » চরফ্যাশন » ঝড়ের সংকেত বোঝেন না চরফ্যাশনের চরের মানুষ
বুধবার, ১৭ মে ২০২৩



চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥

চরবাসীর জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন যেসব সতর্কবার্তা আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রচার করে সেসব বার্তা বোঝেন না চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলে বাসিন্দারা।

তাদের সংকেত বোঝানোর জন্য উল্লেখযোগ্য বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় একের পর এক দুর্যোগে হারাতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জানমাল ও স¤পদ। তবে সংকেত বোঝানোর জন্য যা করা হচ্ছে তার তৎপরতা খুবই কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্যোগের মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সরকারিভাবে চরের সাধারণ মানুষের জন্য দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ পরবর্তী নানা সতর্কতা থাকলেও তা কাজে আসছে না চরের স্বল্পশিক্ষিত মানুষের জন্য। কেননা দুর্যোগ পূর্ববর্তী বন্দরকেন্দ্রিক যেসব বিপদ সংকেত বা মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হচ্ছে তা স্থানীয় কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না।

---

উপজেলার মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন প্রমত্তা মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত ৩২টির অধিক চর রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি চরে ২৫/৩০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। বিপদ সংকেতের বিষয়টি তারা বুঝতে পারে না। কোন সংকেত কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন হওয়ার সম্ভাবনা তা তারা জানেন না। তবে নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতা ও বাতাসের তীব্রতায় বুঝা যায় মনে হয় কোন দুর্যোগ আসছে। যদিও ঝড়ের আগে গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে প্রচার চালানো হয়।

১০নং মহাবিপদ সংকেতের সময় সচেতনতার অভাব থাকার কারণে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যায়। অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত এলাকার মানুষের কাছে নিজের জীবনের চেয়ে গৃহপালিত পশুর জীবন অনেক মূল্যবান মনে করেন।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার সময় মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বললেও ১০ চরের ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছে মাত্র। চরাঞ্চলে জনসংখ্যা অনুপাতে বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্র কম। গৃহপালিত পশু নিরাপদে রাখার কোনো টিলা না থাকায় দুর্যোগ কালীন সময়ে জনগণ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনীহার আরও একটি কারণ।

উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচরের চেয়ারম্যান আবদুর সালাম জানান, বর্তমানে চরে কোনও সাইক্লোন শেল্টার নেই। ইতোপূর্বে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।

তিনি আরও জানান, ঢালচরের জনসংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। ঝড়ের সময় এলাকার স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এক হাজার থেকে ১২শ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা যায়। বাকিরা থাকেন অরক্ষিত ।

চরকুকরীমুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, চরপাতিলায় প্রায় ৪ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ঝুঁকিপুর্ণ একটি আশ্রয়কেন্দ্র। মোখার প্রভাবে ৮ নম্বার সতর্ক সংকেত থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আশ্রয় কেন্দ্রটি ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ার কারণে কেউ আশ্রয় নিতে এখানে আসেননি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি ও মোকাবিলা কর্মসূচির চরপাতিলার সিএইচসিপি টিম লিডার মো. নুরনবী বলেন, দুর্যোগ মুহূর্তে বারবার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্র আসার অনুরোধ করলেও সাইক্লোন সেল্টারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে আশ্রয় নিতে কেউ এই সেল্টারটিতে আসেনি।

এখানকার মানুষ ঘূর্ণিঝড়কে তেমন কিছু মনে করেন না। স্কুল শিক্ষক হারুন বেপারি বলেন, কোন ধরনের সতর্ক বার্তায় কোন মাত্রার বিপদকে বুঝায় এবং এ সময় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা বুঝতে পারেন না চরের মানুষ। যার কারণে চরের মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই মানুষ দুর্যোগের সময় সাইক্লোন শেল্টারে আসতে চান না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল নোমান জানান, ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ইউপি চেয়ারম্যানদের জনগণকে সচেতন করার নিন্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারের বিষয়ে তিনি জানান, পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করবেন।

 

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৬:৩৪   ১৮৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

চরফ্যাশন’র আরও খবর


চরফ্যাশনে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
প্রেমিকের সঙ্গে ‘বিয়ে’ রফাদফায় এসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ধরা তরুণী, অতঃপর…
ইডেনের ছাত্রীর ৫ দিন ধরে অনশন, পালিয়েছে প্রেমিক
চরফ্যাশনে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বিয়ের দাবিতে চরফ্যাশনে প্রেমিকের বাড়িতে ইডেন কলেজ ছাত্রীর অনশন
চরফ্যাশনে দিনব্যাপী প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী
চরফ্যাশনে হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যু সংবাদেই স্বামীসহ সবাই লাপাত্তা
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নির্যাতন
চরফ্যাশন-মনপুরার তিন ইউপি চেয়ারম্যান শপথ নিলেন
নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে পুকুরে ডুবে দুই খালাতো ভাইয়ের মৃত্যু



আর্কাইভ