ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুত ॥ তারপরও মিলছে না ব্যবহারের অনুমতি

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুত ॥ তারপরও মিলছে না ব্যবহারের অনুমতি
সোমবার, ১৫ মে ২০২৩



বিশেষ প্রতিনিধি ॥

গ্যাস আবিষ্কারে ভোলায় কূপ খনন অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ২টি ফিল্ডে ৯টি কূপে পাওয়া গ্যাস মজুতের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৭শ বিসিএস বা ১ দশমিক ৭ টিসিএফ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বাপেক্স) ভূতত্ব বিভাগের গবেষকরা মনে করছেন, ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে। জেলার ৭ উপজেলায়ই গ্যাস রয়েছে। এজন্য জেলা সদরে নতুন করে ২টি ও শাহবাজপুর এলাকায় ২টি এবং ভোলা-বোরহানউদ্দিন উপজেলায় একটি কূপ খননের লক্ষ্যে জরিপ স¤পন্ন হয়েছে।

---

শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র সূত্রে জানা যায়, ৬টি কূপ থেকে প্রতিদিন ১৩০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তলন করা যাচ্ছে। কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আবাসিক ও বাণিজ্যিক নতুন গ্যাস সংযোগের অনুমতি না থাকায় মজুত গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে না। এ কারণে নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি বরাদ্দ নিলেও গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ২০১৭ সাল থেকে ভোলায় নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালে বিশেষ অনুমতি দিলেও তা ৭ মাস না যেতে ফের বন্ধ করা হয়। ফলে ডিমান্ড নোট দেওয়া ও অর্থ জমা দিয়েও অনেকে সংযোগ পাননি। গ্যাস সংযোগ লাইন স্থাপন ঠিকাদার সমিতির স¤পাদক আব্দুল জলিল জানান, ১২ হাজার গ্রাহক আবাসিক সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য শতাধিক আবেদন ঝুলে আছে।

এ স¤পর্কে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সুন্দরবন কোম্পানির ম্যানেজার জানান, ২০১৩ সালে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হলে ২ হাজার ৩৪৫টি রাইজার সংযোগ দেওয়া হয়। ৬ হাজার ৪৫১টি চুলায় গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে মাত্র দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। ফলে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েক হাজার কোটি টাকার গ্যাস।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই গ্যাসলাইন টেনে বা তরল করে সিলিন্ডারে ঢাকায় নিয়ে শিল্পকারখানায় ব্যবহারের বিকল্প পরিকল্পনা যথাযথ নয়। বাপেক্স ভূতত্ব বিভাগের গবেষকরাও এই পদ্ধতিকে ব্যয়বহুল করছেন। তাদের মতে, দেশের শিল্পায়নের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভোলা অঞ্চলেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। এখানে সারকারখানা, অ্যাগ্রো বেইস প্রতিষ্ঠান, ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব।

বাপেক্স ভূতত্ব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক গবেষক আলমগীর হোসেন জানান, বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে এখানে কূপ খনন হচ্ছে। গ্যাস আবিষ্কার হচ্ছে। কিন্তু রিটার্ন পাচ্ছেন না তারা। ওই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভোলায় বিশেষ ইকোনমিক জোন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, একসময় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত ধরা হয় মাত্র ৫শ বিসিএফ। ওই ফিল্ডে বর্তমানে এক টিসিএফ গ্যাসের মজুত রয়েছে। ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-১ ও ভোলা নথ-২ প্রতিটিই পৃথক জোনে রয়েছে। ইলিশা-১ স¤পূর্ণ আলাদা গ্যাস ফিল্ড। এই ফিল্ডেও মজুত অনেক বেশি হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ভোলায় স্থানান্তর করা হলে সুফল মিলবে। ভোলা স্বার্থ রক্ষা উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম হাবিবুর রহমান জানান, ভোলা নৌ ও সড়কপথে দেশের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যুক্ত বলে এখানকার উৎপাদিত পণ্য সহজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি দেশের বাইরে নেওয়া সহজ। ভোলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু এখানে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার দাবি জানান।

বাপেক্স সূত্র জানায়, আমেরিকান কো¤পানি ইউনিকল কূপ খননে ব্যর্থ হলে বাপেক্সের কারিগরি টিম সফলভাবে শাহবাজরপুর গ্যাস কূপ খনন সম্পন্ন করে। এটি বাপেক্সের বিশাল সাফল্য। প্রথম ১৯৯৫ সালে গ্যাসের কূপ খনন শেষে মজুত নিশ্চিত করা হয়। পরে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় গেল ১০ বছরে আরও ৪টি কূপ এবং ওই উপজেলার টবগী ইউনিয়নে ২টি কূপ খনন করা হয়। ২০১৭ সালে খনন করা হয় ভোলা জেলা সদরের ভেদুরিয়া এলাকায় একটি কূপ। আর চলতি বছর পশ্চিম ইলিশায় ৪ মাসে খনন করা হয় দুটি কূপ। নতুন আরও ৫টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদরে ৩টি কূপ খনন করা হবে। এছাড়া চরফ্যাশন, মনপুরা এলাকায় গ্যাসের সন্ধানে সিসিমিক জরিপ কাজ চলতি বছরই শুরু হতে পারে।

 

বাংলাদেশ সময়: ০:৩২:৪৩   ২৯৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


ক্যাপসিকাম চাষে ঝুঁকছেন ভোলার কৃষকরা
ভোলায় তরমুজের ক্রেতা নাই
তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
ভোলার বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আকাশ ছোয়া!
মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল ভোলার কৃষকেরা
ভোলায় SOYEE প্রোগ্রামের চাকুরি বিষয়ক মেলা অনুষ্ঠিত
লাল তীর সীড’র সাথে জিজেইউএস’র চুক্তি স্বাক্ষর
ভোলার বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না বেশীরভাগ পন্য
ভোলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের আবাদ
কাউন্সিলর থেকে উদ্যোক্তা লালমোহনের মনির



আর্কাইভ