বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চরফ্যাশনে সুপারিখোলের প্রকৃতিবান্ধব তৈজসপত্র

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনে সুপারিখোলের প্রকৃতিবান্ধব তৈজসপত্র
রবিবার, ১৪ মে ২০২৩



মোঃ বশির আহম্মেদ ॥

ভোলার চরফ্যাশনের তিন উদ্যোক্তার সুপারি পাতার খোল দিয়ে তৈজস পত্রের ওয়ান টাইম প্লেট, পিরিজ, ট্রে, বাটির তৈরির এই কারখানা দৃষ্টি এখন দেশ জুড়ে। জনতা বাজার এলাকায় তৈজসপত্রের কারখানা উদ্ভোধন করেন নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান।

শুরুতে ৮/১০জন লোক দিয়ে কারখানাটি চালু করা হয়। গ্রামের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়ানো হয়। উদ্যোক্তা তিন যুবক মোঃ সোহেব, নূরে আরাফাত ও রিফাত ভূঁইয়া প্রযুক্তির বদৌলতে ইউটিউবে সুপারির খোল দিয়ে প্রকৃতি বান্ধব তৈজসপত্র তৈরির ভিডিও দেখে উদ্যোগ নেয় কুটির শিল্পের এই কারখানা গড়ার। সুপারী পাতার খোল দিয়ে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করার লক্ষ্যে নিয়ে চীন থেকে মেশিন কিনে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কুটির শিল্পের পরিবেশবান্ধব এই মালামালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে কারখানায় উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এই কারখানাটির মাধ্যমে গ্রামে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

---

গ্রামে সুপারির খোল এখন বিক্রি হচ্ছে এবং গৃহীনিরা খোলপাতা বিক্রি করে সংসারে অর্থ যোগান দিতে পারছে। প্রবাদ আছে ধান, সুপারি, খাল এই তিন নিয়ে বরিশাল। এই বিভাগের মধ্যে সুপারির উৎপাদনে ভোলা বাংলাদেশে প্রথম। যুগের পরিবর্তনের হাওয়ায় প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। প্লাস্টিক পন্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হলেও প্লাস্টিকের বিকল্প বের না হওয়ায় মানুষ প্লাস্টিকের পণ্য বর্জন করতে পারছেনা। ইউটিউব চ্যানেলে সুপারির খোল থেকে পরিবেশ বান্ধব প্লেট, পিরিজ, ট্রে, বাটি তৈরির ভিডিও আকৃষ্ট করেছে উদ্যোক্তা মোঃ সোহেবকে। কারখানাটি করতে অনেক পুঁজির প্রয়োজনে তিনি তার আরও দুই বন্ধুকে এই ব্যবসায় উদ্যোক্তা হিসেবে নেন। চীন থেকে মেশিন আমদানি করে কারখানায় তৈজসপত্রের তৈরি শুরু করেন।

উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিক ভাবে চরফ্যাশন জনতা বাজার এলাকায় এই কুটির শিল্পের কাজ শুরু করেন। ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব প্লেট, বাসন, ট্রে ও বাটিসহ নানা রকম নান্দনিক ডিজাইনের তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি করেন বিভিন্ন এলাকায়। উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা প্রাকৃতি বান্ধব এই প্লেটের চাহিদা এক সময় সারা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ টি আইটেমের তৈজসপত্র উৎপাদন করতে সক্ষম তারা।

ভোলায় এই সর্ব প্রথম প্রকৃতিবান্ধব তৈজসপত্রের কারখানার খবর শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। এই কারখানা টিকে থাকলে বেকারদের কমংসংস্থানের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে সক্ষমতা অর্জন করবেন।

উদ্যোক্তা আরাফাত বলেন, এসব তৈজসপত্র শতভাগ পরিবেশ বান্ধব। ব্যবসায়ী বা ক্রেতা চাইলে রং-তুলি দিয়ে পেইন্টিং করে এসব পণ্য দেয়ালে সাজিয়ে রাখতে পারবেন। প্লাস্টিক পণ্যের মতো নয়, এসব পণ্য পচনশীল হওয়ায় সহজে মাটির সাথে মিশে যায়। হাল্কা এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কোন অনুষ্ঠানে ওয়ান টাইম হিসেবে প্লাস্টিক প্লেটের বিকল্প ব্যবহার করা যায়। এই প্লেট প্লাস্টিকের মতো ভেঙ্গে বা ছিড়ে যায় না। এই প্লেট বানাতে কোনও রঙ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না।

উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, সুপারির খোল দিয়ে এত সুন্দর পণ্য তৈরি করা যায়। সুপারি খোল থেকে তৈরি এসব তৈজসপত্র প্রকৃতিবান্ধব। এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এই পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনীতি যোগান দিতে পারবে এই কুটির শিল্প। চরফ্যশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমানের নেতৃত্বে একটি দল সুপারি খোল দিয়ে প্রকৃতিবান্ধব প্লেট, বাটি, ট্রে সহ বিভিন্ন ডিজাইনের কুটির শিল্প কারখানা বাংলাদেশে এই প্রথম।

দেশের স্বার্থে সম্ভাবনাময় এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোক্তারা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও আকৃষ্ট হবে এই কুটির শিল্প নিয়ে।

 

বাংলাদেশ সময়: ০:২২:৪০   ২৯৯ বার পঠিত