বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার উন্নয়নে মোশারফ হোসেন শাহজাহানের ভূমিকা

প্রচ্ছদ » জেলা » ভোলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার উন্নয়নে মোশারফ হোসেন শাহজাহানের ভূমিকা
শুক্রবার, ৫ মে ২০২৩



---

 

 

॥ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন ॥ 

 

৫ মে। দ্বীপজেলা ভোলার ইতিহাসের এক স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্ব মোশারেফ হোসেন শাজাহানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাবেক মন্ত্রী রাজনৈতিক নেতা বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বহু সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও আলোকিত মানুষ মোশারেফ হোসেন শাজাহানের জীবন ও কর্ম নিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত দল পরিবার ও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হবে। তার বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক হিসেবে ভোলার সংবাদপত্রের অগ্রগতি ও সাংবাদিকতার উন্নয়নে তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করবো।

সেই পাকিস্তান আমলের সূচনালগ্ন থেকেই অর্থাৎ তার ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি সংবাদপত্রের একজন নান্দনিক পাঠক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির একজন নিয়মিত পাঠক। সেই আমলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিন ইত্যাদি তিনি নিয়মিত পাঠ করতেন। জীবনের সূচনা লগ্নে তিনি পাকিস্তান টাইমস পত্রিকার ক্যামেরাপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন তিনি  করেছেন। তিনি সেই সময়ে আলোকচিত্র তথা ছবির প্রদর্শনীতে প্রথম স্থান অর্জন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপি এ) নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি  ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে ভোলার কয়েকজনকে সম্পৃক্ত করেন। যাদের মধ্যে ভোলার প্রবীণতম সাংবাদিক এম এ তাহের অন্যতম। তিনি এমপিএ থাকাকালীন ১৯৬৮ সালে ভোলায় সর্বপ্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান সেক্রেটারি ছিলেন এম এ তাহের। তার নিজের বাসভবনের সামনের রাস্তা সংলগ্ন দোতালায় ভোলা প্রেসক্লাবের প্রথম কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। এখান থেকেই ভোলা প্রেস ক্লাবের যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সরকারিভাবে জায়গা পেয়ে নতুন বাজারের কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়। এরও পরে বিশিষ্ট সমাজসেবী  আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন আহমেদের সহযোগিতায় প্রেসক্লাবের দৃষ্টিনন্দন ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সেই সময় ভোলার এসডিও ছিল সিএসপি অফিসার এ কে এম নাসির উদ্দিন। তার সহযোগিতায় মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের উদ্যোগে ১৯৬৮ সালে ভোলার ইতিহাসে প্রথম পত্রিকা “পাক্ষিক মেঘনা” প্রকাশ করা হয়েছিল। এই পত্রিকা প্রকাশনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, এমপি এ মোশারেফ হোসেন শাজাহান।

স্বাধীনতার পরে ১৯৮০ সালে মোশারেফ হোসেন শাজাহান ভোলার এমপি ও বৃহত্তর বরিশালের ডিডিসি থাকাকালীন ভোলা থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ভোলা কলেজের ছাত্র ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে তার এই উদ্যোগের সাথে আমিও সম্পৃক্ত ছিলাম।

এই উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে ১৯৮০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মরহুম আবু সুফিয়ান বাহারের সম্পাদনায় মোশারেফ হোসেন শাজাহানের উদ্যোগে ‘সাপ্তাহিক ভোলাবাণী’র প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল।

পরে ডিক্লারেশন সমস্যার কারণে কয়েক বছর পরে ১৯৮৪ সালে তারই উদ্যোগে ও সহযোগিতায় ডিক্লারেশন নিয়ে সাপ্তাহিক ভোলা বাণী নিয়মিতভাবে প্রকাশনা শুরু করে। এ সময়ে ভোলা বাণী প্রকাশনার জন্য তারই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বন্ধুজন প্রেস। তাঁর বাসার সামনের সেই দোতলা যেখানে একসময় প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেখানেই সাপ্তাহিক ভোলাবাণীর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। তিনি এই পত্রিকা অফিসে বসতেন এবং মাঝে মাঝে পত্রিকার স¤পাদনার দায়িত্বটিও পালন করতেন।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যূত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পরে পত্রিকার ডিক্লারেশন নীতি কিছুটা সহজীকরণ হয়। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। এ সময়ে ঢাকার পুরানা পল্টনে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে তিনি ভোলা থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের জন্য আমাকে অনুরোধ জানান। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিয়ে ভোলা জেলার প্রথম দৈনিক পত্রিকা প্রকাশনার কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হই। প্রথমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য তাকে চেয়ারম্যান করে আমি এবং মরহুম তারিকুল আলম চৌধুরীকে পরিচালক করে ‘ভোলা প্রকাশনা লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করি। পরবর্তীতে ৯১ এর নির্বাচনে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগদান করার কারণে তিনি আর এই উদ্যোগের সাথে থাকতে পারেননি। ফলে ভোলা প্রকাশনা সংস্থার ইতি ঘটে। কিন্তু আমি যেহেতু এই উদ্যোগের কারণে আমার ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ করে দিয়ে মাঠে নেমেছি তাই অনেকটা মরনপণ লড়াই করে সেই ৯১ সালে একবার আজকের ভোলা পত্রিকার ডিক্লারেশন নেই। নানা কারণে তখন পত্রিকাটি প্রকাশনা করতে সামর্থ্য হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে পুনরায় ডিক্লারেশন নিয়ে ১২ এপ্রিল থেকে দৈনিক আজকের ভোলার প্রকাশনা শুরু করি। তারই সহযোগিতায় তখনকার তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ‘আজকের ভোলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং মোশারেফ হোসেন শাহজাহান বিশেষ অতিথি ছিলেন।

তাই ভোলা জেলার ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। পাকিস্তান আমলে পাক্ষিক মেঘনা পত্রিকার মাধ্যমে তিনি ভোলা থেকে পত্রিকা প্রকাশের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ভোলার প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ভোলাবানী’র উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। ভোলা থেকে প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক আজকের ভোলা প্রতিষ্ঠার পেছনে তিনিই মূল প্রস্তাবক ছিলেন। কাজেই আজকে আমরা সাংবাদিকতার যে বিকাশ দেখি, প্রেসক্লাবের সুরম্য ভবন দেখি, মিডিয়ার যে ভূমিকা দেখি এই সব কিছুর পিছনে তার অবদান অসামান্য ও ঐতিহাসিক।

আজকের দিনে ভোলার সাংবাদিকতার মহান স্থপতি মিডিয়া বন্ধু গণমানুষের নেতা মোশারেফ হোসেন শাজাহানের রুহের মাগফিরাতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের উঁচু মাকাম দান করুন।

 

 

বাংলাদেশ সময়: ২০:১৫:১৯   ৩৩৯ বার পঠিত