চরফ্যাশনের চরাঞ্চলে মহিষ পালনে সংকট ও লাভজনক সম্ভাবনা

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনের চরাঞ্চলে মহিষ পালনে সংকট ও লাভজনক সম্ভাবনা
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩



চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
সবুজ ঘাসে ভরপুর বিস্তৃর্ন চরাঞ্চলে মহিষ পালনে ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মহিষের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করে নগদ লাভের সম্ভাবনাও ব্যাপক। চরফ্যাশন উপজেলাধীন ছোট বড় প্রায় ২০টি চর রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি চর জোয়ারে ডুবে ও ভাটায় ভেসে ওঠে। দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপীয়া থেকে তেতুলিয়া নদী সংলগ্ন খুডার চর, চর বিস্টিন, চর হাসিনা, চর মনোহর, চর কুকরি-মুকরী, চর পাতিলা ও বঙ্গপোসাগর সংলগ্ন মেঘনা নদীর সীমা রেখায় জেগে ওঠা চর তারুয়া, পূর্বের চর, ভাসান চর, বয়ার চর, চর আলিম, আন্ডার চর, কলাগাচিয়া চর ও শিব চরের আয়তন প্রায় ২০ হাজার একরের অধিক। বনায়নকৃত বিস্তৃত বন জঙ্গলে ঘেরা এসব চরের সবুজ ঘাসের বুকে দেখা মেলে শতশত মহিষ বাথানের। এসব চর সংলগ্ন আশপাশের এলাকা থেকে মহিষ বর্গা নেয়া চাষিরা ভাটার সময় চারণভূমিতে মহিষের বাথান ছেড়ে দেয়। মহিষের পাল সারাদিন পেট ভরে ঘাস খায়। এসময় রাখালেরা খাল ও নদীর ¯্রােতে জাল পেতে মাছ ধরে সময় কাটান। ভাটা শেষে জোয়ার আর জোয়ার শেষে ভাটার জলে সূর্য ডোবার ঠিক আগ পর্যন্ত চারণভূমিতেই বিশ্রাম নেয় মহিশের পাল। সারাদিন ঘাস লতাপাতা খাওয়া শেষে বিকেল হলেই রাখালের হাঁক-ডাকে নদী ও খাল সাঁতরে মহিষের বাথান গিয়ে আশ্রয় নেয় খোলা মাঠ অথবা মহিষ কিল্লায়।

---

চর কচ্ছপীয়ার মহিষের রাখাল আবদুল বারেক (৪৫) জানান, সকালে নদীতে মহিষ নামিয়ে দিলে ভেসে ভেসে বড় মহিষের পিছু মাঝারি ও ছোট মহিষগুলো চরে গিয়ে ওঠে। গেলো বছর তিনি ১৬টি মহিষ বর্গা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮টি মহিষ বাচ্চা দিয়েছে। যেগুলোর বয়স বর্তমানে ৬-৮মাস। তাঁর সব মিলিয়ে এখন ২৪টি মহিষ। চর হাসিনা জোয়ায়ারের সময় জলমগ্ন থাকে। ভাটার সময় কাদামাখা কচকচে ঘাস খেয়ে পেট ভরে যায় মহিষগুলোর।
বেলা ডোবার আগেই আবদুল বারেক নৌকা নিয়ে চলে যান চরে। এসময় জোয়ারের পানিতে চর ঘাস ডুবে যায় কানায় কানায়। এসময় মহিষের বাথান স্রোতে গা ভাসিয়ে ঢেউ ভেঙে সাঁতরে ফিরে আসে চর কচ্ছপীয়ার দক্ষিণে দৌলতপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায়। বারেক, হালিম, কামালসহ একাধিক মহিষ বাথানের রাখাল জানান, চর ছাড়া বড় পরিশরে মহিষ পালন করা সম্ভব না। গ্রামে পর্যাপ্ত ঘাসের সংকট রয়েছে। ভাটার সময় তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরে ঘাস খাওয়ানোর জন্য নদীতে নামিয়ে দেন তাঁরা। তারা আরও জানান,একেকটি মহিষের পেছনে বছরে ৩২-৩৩ হাজার টাকা খরচ হয়। বছর শেষে বাচ্চা ও দুধ বিক্রি বাবদ টাকা আয় করেন এসব চাষিরা। আর মহিষের বাচ্চা টিকিয়ে রাখতে নানা প্রতিকূল সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। পাশাপাশি ওষুধ বড়ির পেছনে প্রচুর টাকাখরচ হয় বলেও জানান এসব রাখাল ও মহিষের মালিকরা। এসব চরের গবাদিপশুর মালিক,বর্গাদারসহ খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরফ্যাশনের উপকূলবর্তী চরাঞ্চলে মহিষ পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কয়েকটি সমস্যা সমাধান করলে মহিষ পালন প্রচুর লাভজনক একটি খাত হয়ে উঠবে। এ উপজেলায় প্রচুর চর রয়েছে। এরপরেও গো-চারণ ভূমি ও কাঁচা ঘাসের সংকট থেকেই যায়। এসব চরগুলোর হাজার হাজার হেক্টর জমি প্রভাবশালী মহল ও বন বিভাগের দখলে রয়েছে। এসব চরে গবাদিপশু চরালেই অনেকেই টাকা দিতে হয়। এছাড়াও অপরিকল্পিত গ্রাম ও হাটবাজার নির্মিত হওয়ায় চারণভূমি ও ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি নোনাপানির সমস্যা। শীতের শেষে নদীর পানি লবনাক্ত হয়ে যায়। যা চার-পাঁচ মাস থাকে। মাঝে মাঝে চরেও ওঠে নোনাপানি। নোনাপানিতে ভরে যায় পুকুর ও নালার পানি। এ পানি খেয়ে গরু-মহিষের পাতলা পায়খানা, গায়ের পশম ঝরে যাওয়া, উকুনসহ নানা রকম রোগ হচ্ছে। অনেক সময় রোগাক্রান্ত ও মরা বাছুরও প্রসব হয় এসব মহিষের। পাশাপাশি চরগুলোর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলোতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে অসাধু জেলেরা। বিষ প্রয়োগের ফলে এসব পানি ও নোনাপানি খেয়ে অনেক মহিষ মারাও যাচ্ছে। বিশেষ করে পৌষ ও মাঘের সময় এসব চরে মিষ্টি পানির (স্বাদু) অভাব দেখা দেয়।
চরগুলোতে প্রায়শই ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ার দেখা দেয়। উপকূলীয় এই অঞ্চলে বছরে অমাবস্যা-পূর্ণিমায় তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদীতে বিপৎসীমা অতিক্রম করে জোয়ারের উচ্চতা। ঝড়-ঝঞ্চাও দেখা যায় হরহামেশা। এ সময় এক চর থেকে আরেক চরে বা অন্যকোনো জেলা উপজেলায় এসব চরের মহিষ ভেসে যায়। হারিয়ে যাওয়া এসব মহিষ খুঁজে বের করতে ঘাম ঝড়া পরিশ্রমের সঙ্গে অনেক টাকাপয়সাও খরচ করতে হয় মালিকদের। অনেক সময় টাকা খরচ করেও পাওয়া যায়না হারানো মহিষগুলো। যার ফলে উপজেলার প্রত্যেকটি চরে সরকারিভাবে নির্মিত পর্যাপ্ত কিল্লা ও চারণভূমির প্রয়োজন। এসব অঞ্চলে বাথানভিত্তিক যে মহিষগুলো পালন হচ্ছে, সেই মহিষগুলোর অন্তপ্রজনন বা ইনব্রিডিং সমস্যা রয়েছে। বংশপরম্পরায় একই বাথানের বা একই গত্রের চেলামহিষ (পুরুষ মহিষ) দিয়ে ব্রিডিং হচ্ছে। এতে মহিষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও দুধ, মাংস কমে যায় বলে যানা যায়। যে মহিষ ৫-৬ লিটার দুধ দিতে পারে, সেটি দিচ্ছে দেড় থেকে দুই লিটার। উপজেলা ভেটেনারী সার্জন রহমত উল্লাহ বলেন, চরফ্যাশনে গবাদিপশু পালনে ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে।
যার মধ্যে মহিষ পালন ও দুধ উৎপাদনে উদ্যোক্তা খামারি বা চাষিদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি মহিষের দুর্বল জাত চিহ্নিত করতে হবে। বেশি মাংস ও দুধ উৎপাদনে সক্ষম উন্নত মুরাহ ও নীলি জাতের মহিষ সংগ্রহ করে তা বিস্তার করতে হবে। এর মাংস ও দুধ উৎপাদন খুবই ভালো। একটি মুরাহ মহিষ ২০-২২ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। বর্তমানে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মুরাহ ও নীলি জাতের মহিষের সিমেন দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রত্যেকটি এলাকাতেই চারণভূমি করা প্রয়োজন। চরাঞ্চলের পুকুরের পাড়গুলো উঁচু করা প্রয়োজন। যাতে নোনাপানি প্রবেশ করতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২০:২৬   ২৯৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


ক্যাপসিকাম চাষে ঝুঁকছেন ভোলার কৃষকরা
ভোলায় তরমুজের ক্রেতা নাই
তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
ভোলার বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আকাশ ছোয়া!
মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল ভোলার কৃষকেরা
ভোলায় SOYEE প্রোগ্রামের চাকুরি বিষয়ক মেলা অনুষ্ঠিত
লাল তীর সীড’র সাথে জিজেইউএস’র চুক্তি স্বাক্ষর
ভোলার বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না বেশীরভাগ পন্য
ভোলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের আবাদ
কাউন্সিলর থেকে উদ্যোক্তা লালমোহনের মনির



আর্কাইভ