বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীতে জেলেদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক মাসে অন্তত ৩০ জেলেকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদের ভয়ে অনেক জেলে নদীতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
জেলেরা বলছেন, মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পর থেকেই হামলা করে ডাকাতদল। অনেক সময় তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন। ডাকাতদের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছে না জেলেদের পরিবার।
সরেজমিন জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই মেঘনা নদীতে হঠাৎ ডাকাতদের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনের কাছে না জানানোর জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের জেলে আরিফ হোসেন মাঝি ও মিরাজ মাঝি। মেঘনা নদীতে রাতে মাছ শিকার করতে গিয়ে আরিফ দুবার ও মিরাজ তিনবার ডাকাতির শিকার হয়েছেন। ডাকাতরা তাদের অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে পরিবার সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্ত করে আনে পরিবার।
জেলে আরিফের বাবা আলমগীর মাঝি ও মা হনুফা বেগম বলেন, ডাকাতদের ভয়ে অপহরণের বিষয়টি প্রশাসনকে জানাইনি। ছেলেকে নদীতে মাছ শিকার করতেও যেতে দেই না।
একই এলাকার রাসেল মাঝি ও ইসমাইল জানান, রাতে নদীতে বেশি মাছ শিকার করা যায়। কিন্তু তারা ডাকাতের ভয়ে রাতের বেলা নদীতে মাছ শিকার করতে পারেন না। এতে সংসার চালাতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মেঘনা নদীর জেলে মো. বাছেদ জানান, তাদের ইউনিয়নের অনেক জেলে ডাকাতদের কবলে পড়েছেন। এখন ডাকাতের ভয়ে ওই ইউনিয়নের অনেক জেলে নদীতে মাছ শিকার করতে যান না।
তজুমদ্দিন ¯¬ুইস ঘাটের আড়তদার মনোয়ার হোসেন ও শাহে আলম জানান, ডাকাতদের ভয়ে আড়তের অনেক জেলে নদীতে মাছ শিকারে যান না। এতে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। নদীতে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের টহল জোরদার অপরিহার্য।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. এম হাসান মেহেদী জানান, জেলেরা যাতে নদীতে নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারেন সেজন্য কোস্টগার্ড থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি ভোলার চর এলাকা থেকে মেঘনা নদীর দুর্ধর্ষ ডাকাত আবদুল্লাহ বাহিনীর প্রধানসহ চার ডাকাতকে পিস্তল, তাজা গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার জেলে রয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫০৬ জন।