বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চরফ্যাশনে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ভূস্বর্গ

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ভূস্বর্গ
বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২



চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
শাক-সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এর সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি ও বাতাস, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র। এ ক্ষতি থেকে কৃষক, ভোক্তা ও পরিবেশকে বাঁচাতে ভোলার চরফ্যাশনের চর মাদ্রাজ বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষের আবাদ হয়েছে। এ আবাদ যেন বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের এক ভূস্বর্গ।
পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘আইপিএম মডেল ইউনিয়ন চর মাদ্রাজে একশ একর জমিতে পাঁচ শতাধিক কৃষক বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে জড়িত রয়েছেন।

---

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার চর মাদ্রাজ আইপিএম মডেল ইউনিয়নের ২০টি দলে পাচঁশত জন কৃষকের সমন্বয়ে একশ একর জমি আনা হয়েছে নিরাপদ সবজি চাষের আওতায়। এই চাষ পদ্ধিতে জৈব কৃষি ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে রবি মৌসুমের সবজি উৎপাদন করছেন। সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, শসা, মরিচ, লাউ ইত্যাদি। প্রকল্পভুক্ত এসব সবজিক্ষেতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, মালচিং সীট, নেট হাউস, জৈব বালাইনাশক, ইকোমেকস, বায়োট্রিন ইত্যাদি।
প্রকল্পভুক্ত কৃষকদের বিনামূল্যে সবজির চারা, উৎপাদনের জন্য বীজ, কেঁচো সার, সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক, বিভিন্ন ধরনের লিউর, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, মালচিং সীট প্রদানসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। এসব ব্যবহার পদ্ধতির ওপর কিষান-কৃষাণীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে ফাঁদ স্থাপনের কায়দা- কৌশল।
প্রকল্প ভূক্ত কৃষক শাহিনসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসে সহযোগিতায় আমরা বিষ মুক্ত সবজি চাষ করেছি। এ সবজি চাষে কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করিনি। ফেরোমোন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক, বিভিন্ন ধরনের লিউর, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, মালচিং সীট ইত্যাদি ব্যবহার করেছি। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগন নিয়োমিত সবজি ক্ষেত পরিদর্শন করেন এবং আমাদের পরামর্শ দেন। বিষ মুক্ত সবজি চাষে আমাদের খরচ কম হয়েছে। এখানকার বিষ মুক্ত সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো বলে আশা করছি। এতে ভালো দাম পাবো। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য কৃষি অফিস উদ্যোগ নিয়েছেন।
অত্র ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মর্তা বিকাশ চন্দ্রদাস বলেন, সময়মতো প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ বিতরণের ফলে মাঠে এখন করলা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, টমেটো, বেগুন, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্যাপকভাবে হয়েছে। জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে সবজি ফসলের শোষক পোকা দমন হয়েছে।
উপসহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ছানাউল্লাহ আজম বলেন, আইপিএম অথবা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি না করেই স্বল্প খরছে অল্প সময়ে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব বিধায় কৃষকরা এখন এই পদ্ধতিতেই বেশীসবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, অত্র ইউনিয়নে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে এটাকে আইপি মডেল ইউনিয়নে রুপান্তরের লক্ষে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিস। ক্লাষ্টার/গ্রুপ ভিত্তিক উৎপাদিত নিরাপদ সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বাজারজাত করণের লক্ষে কাজ করছে অত্র প্রকল্পটি।

বাংলাদেশ সময়: ০:২৭:০৩   ৩০২ বার পঠিত