লালমোহনের আবু তাহেরের যে কষ্টের শেষ নেই…

প্রচ্ছদ » ফিচার » লালমোহনের আবু তাহেরের যে কষ্টের শেষ নেই…
বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২



লালমোহন প্রতিনিধি ॥
শিশুকাল থেকেই তারা সুস্থ সবল; কিন্তু বয়স ১৫ অতিক্রম করলেই এক-এক করে ৩ মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। গত ১০ বছর ধরে এই ৩ মেয়েকে নিয়ে চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে একটি দিনমজুর পরিবার। ছোট আরও এক ছেলেকে নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রহিমপুর গ্রামের এই ৩ বোনকে ঘরেই আটকে রাখতে হচ্ছে বাবা-মাকে। এরা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না। হাঁটতে পারে না। হাঁটতে গেলেই পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। উদ্ভট আচরণ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

---

দরিদ্র পিতা আবু তাহেরের পক্ষে তাদের পেটের ভাত জোগাড় করতেই কষ্ট হচ্ছে, সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো কোনো সামর্থ্য নেই ওই পরিবারের। গরিবের ঘরে এমন বিবাহযোগ্য ৩টি মেয়েকে লালন-পালন করতে পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, চরভূতা রহিমপুর গ্রামের রোশন আলী বাড়ির আবু তাহের দিনমজুরি করে সংসার চালান। বয়স ৫০ পার হয়েছে। কাজ না থাকলে বাড়িতে বসে বাঁশ দিয়ে হাজি তৈরি করে বিক্রি করেন।
স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের গর্ভে প্রথমে জন্ম নেয় তাছলিমা। ধীরে ধীরে তাছলিমা বড় হতে লাগলে বুঝতে পারে সে বাকপ্রতিবন্ধী। শুধু বাকপ্রতিবন্ধীই নয়, বয়স বাড়লেও তার শিশুসুলভ আচরণ যায়নি। দ্বিতীয় মেয়ে আকলিমা জন্ম নিলে স্বাভাবিকভাবেই বড় হতে থাকে। বয়স ১৫ পার হতেই এ বয়সে বিয়ে দেওয়ার জন্য কথাবার্তা চলে আকলিমার। বড় মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে রেখে আকলিমার জন্যই বিয়ের কথাবার্তা চালান বাবা-মা। কিন্তু ওই সময়ই দেখা দেয় আকলিমার মধ্যেও পরিবর্তন। হঠাৎ করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না।
উদ্ভট আচরণ শুরু করে দেয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। আটকে রাখতে হয় ঘরে। না হলে বাবা-মাকে মারতে যায়। তৃতীয় মেয়ে সোনিয়াও ছোটবেলায় ভালো ছিল। তাকে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে দেওয়া হয়। কিন্তু তারও বয়স ১৫-১৬ পার হতেই একই আচরণ শুরু হয়। ওই ঘরে এখন ৩ মেয়েই প্রতিবন্ধী।
এদের নিয়ে বাবা আবু তাহের ও মা মোর্শেদার দুশ্চিন্তা থেমে নেই। চতুর্থ আরও একটি মেয়ে আছে তাদের। তাকে আগে ভাগেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবার ছোট ছেলে আবু ছায়েদ। তার বয়স এখন ১২ বছর। তাকে লালমোহন বাজারে একটি চায়ের দোকানে কাজে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় ৩ মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে বাবা-মাকে।
বাবা আবু তাহের বলেন, অভাবের সংসারে ৩ মেয়ের এ অবস্থায় আমরা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। ভালো চিকিৎসা করাতে পারছি না। তবুও সোনিয়াকে নিয়ে বরিশাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দেন ডাক্তার। কিছুদিন ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরে টাকার অভাবে আর ওষুধ কিনতে পারিনি। তাদের চিকিৎসার জন্য এর আগে বাড়ির ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। এখন নিজের ঘরভিটা ছাড়া তেমন কিছু নেই।
মা মোর্শেদা বেগম জানান, ৩ মেয়ের এমন করুণ পরিণতি হবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তাদের সেবা করতে করতে তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে গেছেন। গোসল করানো, নিয়মিত খাইয়ে দেওয়া, প্রাকৃতিক কাজ সব কিছুই একা তাকে সামাল দিতে হচ্ছে। এখন নিজেও চলতে পারেন না। শরীরেও নানান রোগ বাসা বেঁধেছে মায়ের। তিনি কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান টিটব জানান, আবু তাহেরের ৩ মেয়ে প্রতিবন্ধী। তাদের নামে পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কিছু সহযোগিতা পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০:২৩:৫৩   ২০৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


ক্যাপসিকাম চাষে ঝুঁকছেন ভোলার কৃষকরা
লালমোহনে ব্রিজের ওপর ‘সাঁকো’!
মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ॥ সংসার চালানোই দায় জেলেদের
ভোলার বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আকাশ ছোয়া!
মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল ভোলার কৃষকেরা
ভোলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের আবাদ
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ভোলার ক্রেতারা অসন্তুষ্ট
বিচ্ছিন্ন চরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি
ভোলায় বেকার আড়াই লাখ জেলে ॥ দুই মাস সংসার চলবে কীভাবে?
প্রাথমিকেই নিভে যায় চর কচুয়াখালীর অধিকাংশ শিশুর শিক্ষার আলো



আর্কাইভ