চরফ্যাশনে অবৈধ ইট ভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » চরফ্যাশনে অবৈধ ইট ভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি
মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২



---

চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীন পরিবেশেই গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি অবৈধ ইটভাটা। চরফ্যাশন উপজেলায় অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় আবারো তা চালু করেছে প্রভাবশালী মহল। শুধুমাত্র ড্রামসিটের চিমনি দাড় করিয়ে বনের কাঠ উজাড় করে ফসলি জমির মাটি ও ভাটা সংলগ্ন সরকারী খালের মাটি দিয়ে এ ভাটাগুলোতে ইট পোড়াচ্ছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছাড়াই এ অবৈধ ভাটাগুলো পরিচালনা করছে। বনের কাঠ উজাড় করে পরিবেশ ধ্বংস করে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রশাসনের উদাসিনতাকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা। চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ আইচার মানিকা, হাজারীগঞ্জ, চরকলমী, আবদুল্লাহপুর, রসুলপুর, নীলকোমল, ঘোষেরহাটসহ আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আসলামপুর, বেতুয়া ও মাদ্রাজ ইউনিয়নে রয়েছে এ অবৈধ ভাটাগুলো। ভাটাগুলোতে রয়েছে গাছ কাটার স’মিল। এই সো-মিলে হাজার, হাজার মন লাকড়ি ও গাছের গুড়ি কেটে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে। দিনরাত কাঁচা ইট তৈরী করে সাড়িঁসাড়িঁ ইট সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ড্রামসিটের তৈরী চিমনি ব্যবহার করে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে এলাকার নারী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ ভাটার কালো ধোয়ার কারণে ভাটা সংলগ্ন জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব জমিতে এখন চাষাবাদ করতে পারছেনা বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। কৃষক কামাল হাওলাদারসহ একাধীক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে উপজেলা ও জেলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো নজরদারী নেই। দুই বছর আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ছোট, ছোট কয়েকটি ইট ভাটা গুড়িয়ে দিলেও পুনরায় ওই ভাটাগুলো অসাধু কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে চালু করেছে দাবি করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়দের একাধীক অভিযোগ করলেও ফসলি জমি থেকে সরিয়ে নিচ্ছেনা এসব ভাটা। কৃষক কালু মিয়া বলেন, অবৈধ ইট ভাটার কারণে আমার ১০-একর জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারিনা। জমিগুলো কারো কাছে লগ্নী (বছড় প্রতি ভাড়া) দিতে পারিনা। চাষিরা এই জমি নিতে চাচ্ছেনা।
স্থানীয় জামাল ভূইয়া, মতলব মুন্সি, আবদুল কাশেমসহ একাধীক এলাকাবাসী বলেন, কলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল গ্রামে ফসলী জমি নষ্ট করে আবাসীক এলাকায় ড্রামসিট চিমনি দ্বারা লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরী করা হচ্ছে। হাজার হেক্টর জমির ফসলী ক্ষেত বনজ ও ফলদ বাগানসহ শতশত বসত বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব অবৈধ ভাটার পাশে।
দক্ষিণ আইচা মানিকা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত একাধীক ইট ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও অদৃশ্য অনুমোদনে চলছে ভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভেঙে দেয়ার পরেও পুনরায় এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হলেও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে তারা দাবি করেন।
সচেতন মহল বলেন, এরআগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম নজরে আসছেনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর।  ভাটাগুলোতে নদী ও খাল থেকে ড্রেজিং দিয়ে মাটি এনে ইট তৈরী করা হচ্ছে বলেও ভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, রাতভর ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে ফসলী জমির পাশে মাটি কেটে গভীর খনন করে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করছে ভাটাগুলো। ভেঙে ফেলা ভাটাগুলো পুনরায় নির্মাণের বিষয়ে কয়েকটি ভাটার মালিক জানান, তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। এর পরেও প্রশাসনের অভিযানে তাঁেদর ভাটাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। যার ফলে তাঁরা লাখ, লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন। ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ বান্ধব ইট ভাটা নির্মাণে প্রচুর ইটের প্রয়োজন। আর তাই ইট পুড়িয়ে পরিবেশ বান্ধব চিমনি তৈরী করতে হবে বলে জানান এসব ভাটা মালিক।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দন্ডনিয় অপরাধ। তিনি আরও জানান, চরফ্যাশনে প্রায় ১২ থেকে ১৩ টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিগগিরই একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন এবং ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ঠিক কতটি ভাটার অনুমোদন রয়েছে রয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তর দেননি এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:১২:২০   ১৮৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থনীতি’র আরও খবর


ক্যাপসিকাম চাষে ঝুঁকছেন ভোলার কৃষকরা
ভোলায় তরমুজের ক্রেতা নাই
তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি
ভোলার বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আকাশ ছোয়া!
মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফল ভোলার কৃষকেরা
ভোলায় SOYEE প্রোগ্রামের চাকুরি বিষয়ক মেলা অনুষ্ঠিত
লাল তীর সীড’র সাথে জিজেইউএস’র চুক্তি স্বাক্ষর
ভোলার বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না বেশীরভাগ পন্য
ভোলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গমের আবাদ
কাউন্সিলর থেকে উদ্যোক্তা লালমোহনের মনির



আর্কাইভ