বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

৩০ বছরের পুরোনো লালমোহনের ব্যতিক্রমী নৌকার হাট

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » ৩০ বছরের পুরোনো লালমোহনের ব্যতিক্রমী নৌকার হাট
বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২



স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলার লালমোহনের ঐহিত্যবাহী নৌকার হাট। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসছে ব্যতিক্রমী এ হাট। এ হাটে সারা বছর নৌকা তৈরি হলেও শুস্ক মৌসুমে কেনাবেচা জমে ওঠে। প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার কম-বেশি নৌকা বিক্রি হয়।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে মাছ বেশি ধরা পড়লে নৌকা কেনাবেচা হয় বেশি। নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন লালমোহনের ২ শতাধিক শ্রমিক-কারিগর। এখানকার কারিগরদের তৈরি নৌকা চলে যায় কক্সবাজার, খুলনা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

---

সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কোনো নজরদারি নেই। যার ফলে এ শিল্পের তেমন প্রসার ঘটছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দ্বীপজেলা ভোলার ১৯০ কিলোমিটার জলসীমায় ২ লাখের অধিক জেলের মাছ শিকারের প্রধান বাহন হচ্ছে নৌকা-ট্রলার। শুধু তাই নয়, উপকূলের দ্বীপচরে খেয়া পারাপারেও নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই তো এ জেলায় নৌকার কদর বেশি।
কিন্তু সেই নৌকা-ট্রলার নির্মাণে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকলেও ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গজারিয়া বাজারে তৈরি হচ্ছে নৌকা-ট্রলার।
প্রতিদিন শতাধিক কারিগর বা মিস্ত্রি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটান। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কারিগরদের।  কাঠ, পেরেক, হাতুড়ি ও করাতের শব্দে মুখরিত নৌকার হাট।
শ্রমিকরা জানালেন, আকার এবং আয়তন ভেদে নির্ভর করে কোন নৌকা তৈরিতে কত সময় এবং কী কী উপকরণ লাগবে। একেকটি নৌকা তৈরিতে কখনও এক সপ্তাহ আবার ১৫-২০ দিন সময় লাগে।
নৌকা তৈরির কারিগর মনির উদ্দিন বলেন, আমি অনেক বছর ধরে নৌকা তৈরি করছি।  আগে দৈনিক মজুরি কম ছিল, এখন পাচ্ছি ৯০০ টাকা করে।
নাগর মিস্ত্রি নামে একজন বলেন, লালমোহন থেকে অনেকেই নৌকা কিনতে আসেন। এখানেই নৌকা তৈরি হয়। আবার এখান থেকেই বিক্রি হয়। প্রতিটি নৌকা আকার ও প্রকার ভেদে গড়ে ৪০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিলন মিস্ত্রি বলেন, ভালোমানের কাঠের তৈরিকৃত নৌকা ১০-১২ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়। এখানকার নৌকার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়।
পাইকার নুরু ব্যাপারী বলেন, প্রায় ২০০ শ্রমিক নৌকার তৈরি সঙ্গে যুক্ত। তাদের জীবিকা চলে নৌকা তৈরি করে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। তবে শ্রমিক-কারিগরদের যদি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে ঋণের আওতায় আনা যায়, তাহলে এ শিল্পের প্রসার ঘটবে।
ভাস্কর পোদ্দার বলেন, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নৌকাহাট। প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছি। একেকটি নৌকা বিক্রি করে ১০-২০ হাজার টাকা লাভ হয়।
এদিকে লালমোহনের শ্রমিকদের তৈরিকৃত এসব নৌকা চলে যায় বিভিন্ন জেলায়। তবে শ্রমিকদের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ নেবে এমনটাই মনে করছেন শ্রমিকরা। এ শিল্পটিকে আরও এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রুহুল কুদ্দুছ বলেন, এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটাতে যা যা করণীয়, সেটি আমরা অবশ্যই করবো।
সরকারি সহায়তা পেলে পিছিয়ে থাকা বৃহৎ এ নৌকাহাট জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৩১:৪২   ২০৪ বার পঠিত