দৌলতখান প্রতিনিধি ॥
ভোলার দৌলতখানের ১৪ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছে। আজও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনরা এখন বিলাপ করছেন। জেলেপল্লিতে চলছে হাহাকার, শোকের মাতম। নিখোঁজ জেলেদের বাবা-মা, স্ত্রী ও ভাই-বোনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
বুধবার সরেজমিন চরপাতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড, ভবানীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড, চরখলিফা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখা যায়।
স্বজনরা জানান, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার নাছির উদ্দিন খানের মাছ ধরার ট্রলারে তারা (নিখোঁজ জেলেরা) কাজ করতেন। ২১ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার সময় ট্রলারের মাঝি দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দুলাল মাঝি জাল মেরামত কাজের কথা বলে জেলেদের চরফ্যাশন উপজেলার সাগর পাড়ে নিয়ে যান। কিন্তু জাল মেরামতের কাজ না করিয়ে জেলেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই মাছ ধরতে সাগরে পাঠানো হয়।
২৪ অথবা ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। ট্রলারটিতে দৌলতখানের ১৪ জনসহ মোট ২১ জন জেলে ছিল বলে জানা যায়।
ট্রলার মালিক রায়পুরের নাছির উদ্দিন খান অবশ্য দাবি করেন, এক মৌসুমের জন্য ট্রলারটি দুলাল মাঝি ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে ভাড়া নেন। সাগরে যাওয়ার ব্যাপারে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে উপজেলার চরপাতা ৯নং ওয়ার্ডের আবদুল মোতালেবের ৩ ছেলে মো. ইয়াছিন, মো. নজির ও মো. মহসিন রয়েছেন।
ইয়াছিনের মেয়ে রেহানা সাংবাদিকদের কাছে তার বাবার কথা বলতে গিয়ে কান্নাকাটির এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান।
একই এলাকার এক বৃদ্ধ তার ছেলে আক্তার হোসেনকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। ওই ট্রলারের জেলে দুই কন্যাসন্তানের জনক নুরে আলমের স্ত্রী বিবি হাজেরা নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে বলছিলেন, ২২ অক্টোবর ট্রলার চালক দুলাল মাঝি আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে জাল মেরামতের কথা বলে শামরাজ নিয়ে যান। সেদিনই আমার কোলজুড়ে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সে (স্বামী) ছেলের মুখ দেইখা যাইতে পারে নাই।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন, মো. আকতার হোসেন, মো. ইয়াছিন, নজির আহাম্মদ, মো. আলী, আবুল খায়ের, আলাউদ্দিন, নুরে আলম, শরিফ হোসেন, মহসিন, আবু আবদুল্লা, মহিউদ্দিন, মো. মিরাজ, হান্নান ও দুলাল মাঝি।
দৌলতখান থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:০৯:৫৭ ২৭০ বার পঠিত