আদিল হোসেন তপু ॥
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাকে উপক্ষে করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১১দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার দৌলতখানের ১৬ জেলে। এতদিনেও তাদের খোঁজ না পেয়ে চরম উদ্বেগ আর শংকায় দিন কাটাচ্ছে পরিবারের স্বজনদের। নিখোঁজদের উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হুমকীর মুখে রেখে রেখেছে নিখোঁজ পরিবারের স্বজনদের। আর জেলা মৎস কর্মকর্তা বলছেন নিখোঁজ হওয়া জেলেদের খবর কেউ যানায়নি। নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসলে আমরা উদ্ধারে ব্যবস্থা নিবো বলে জানান।
মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কালিন সময়ের শেষ দিকে এসে ভোলার চরফ্যাশনের সমরাজ ঘাট থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ ধরতে যায়  নাছির উদ্দিন খান মালিকানাধিন “খান মৎস ভান্ডার” নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার।এতে ২১ জন জেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে গিয়ে ট্রলারে তলা ফেটে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার দৌলতখানের ১৬ জেলে। বাকি পাচঁ জনকে অন্য আরেকটি ট্রলার উদ্ধার করেছে বলে জানান উদ্ধার হওয়া জেলেরা।

জেলে পরিবারের স্বজনা বলছেন, জাল বোনার কথা বলে ট্রলার মালিক নাছির উদ্দিন খান  এর ভাই নেছার উদ্দিন দৌলতখানের চরপাতা থেকে ১৮ জন জেলেকে সামরাজ ঘাটে নেয়। কথা ছিলো অভিযানের পরে সাগরে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তুু ট্রলার মালিক তাদেরকে ভয় দেখিয়ে সাগরে মাছ পড়েছে বলে জোড় করে সাগরে মাছ ধরতে পাঠায়। দীর্ঘ ১১ দিনেও ফিরে না আসায় পরিবারের স্বজনরা এখন স্বজন হারানোর শঙ্কায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রিয়জনকে ফিরে পেতে স্বজন হারানো বাবা,স্ত্রী,ভাইরা। তাই তো নিখোঁজদের জীবত অথবা মৃত অবস্থায়  ফিরে পেতে চাচ্ছেন সরকারের সহায়তা।নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলোর অভিযোগ, বৈরি আবহাওয়ায় ইলিশ ধরারলোভে জোর করেই জেলেদের সাগরে পাঠায় ট্রলার মালিক।
নিখোঁজ ১৬ জনের মধ্যে উপজেলার চরপাতা গ্রামের নুরে আলমের ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। মাত্র ১১ দিন বয়সেও বাবার মুখ দেখার সৌভাগ্য হারিয়েছে আফরা। স্বামী-সন্ধান না পেয়ে থামছে না হাজেরা বিবির বিলাপ। বাবার পথ চেয়ে অপেক্ষায় আছে তার আরও ৩ সন্তান।
একইভাবে নিখোঁজ প্রতিবেশী মহসিন। তার স্ত্রী রানু বিবির অবস্থাও পাগল প্রায়। শরীফের স্ত্রী মারজান বেগমও দেড় মাসের বাচ্চা নিয়ে দিশেহারা। তাদের মতো নিখোঁজ আরও ১৪ জেলের পরিবারেও নেমেছে বিষাদের ছায়া।
নিখোঁজ মহসিন এর স্ত্রী স্বামী সোগে বার বার অজ্ঞান হয়েছে পড়ছেন। বলনে, নিষেধাজ্ঞার সময় আমি তাকে (মহসিন স্বামী) যেতে না বলছি। সে আমাকে না বলে পরিবারেরর সদস্যদের পেলাডারে জাল বুনতে গেছে বলে  সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এখন নিখোঁজ। কে এখন কে আমাগোরে দেখবো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নিখোঁজ ইয়াছিন মাঝির ছেলে মো: জুয়েল বলেন, আমার বাবা  যাওয়ার আগে আমার মা কে বলছে জাল বুনতে যাই। জাল বুনা পরে অভিযান শেষে সাগরে মাছ ধরতে যাইবো। যাওয়ার পরে ট্রলারের মালিক নাছির উদ্দিন খান তার চাপে পইরা সকল জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যায়। এখন ১১ দিন ধরে আমার বাবা সহ ১৬ জন জেলে নিখোঁজ। এখন আমাদের একটাই চাওয়া আমার বাবা কে জীবিত অথবা মৃত হলেও আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।
নিখোঁর জেলেরা হলেন- ১, মোঃ আকতার হোসেন (২৫), ২। মোঃ ইয়াছিন (৬০), ৩ মোঃ নজির আহম্মদ (৪০), ৪ মোঃ আলী (৪৫), ৫। মোঃ আবুল খায়ের (৪৭), ৬। মোঃ আল আমিন (২৪),৭। মোঃ নুরে আলম (৩৪), ৮। মোঃ শরিফ হোসেন (২০), ৯।মোঃ মহসিন (৪৫), ১০। মোঃ আবু আব্দুল্লাহ (৩৪), ১১। মোঃ মহিউদ্দিন (৫৭), ১২। মোঃ মিরাজ (৩৫), ১৩। মোঃ মিজান মাঝি (৪৫), ১৪। ডালিম (১৭), ১৫। মো ফিরোজ (৫৫), ১৬। মোঃ দুলাল (৪৭) তিনি আরো বলেন ট্রলার মালিক নাছির উদ্দিন এই নিখোঁজের জন্য দাই। তাকেই এর দায় ভার নিতে হবে।
ট্রলার মালিক মালিক নাছির উদ্দিন খান বলেন, আমার কাছ থেকে ট্রলার মাঝি দুলাল  ভাড় করে নিছে ট্রলারটি মাছ ধরার জন্য।ইতিমধ্যে নিখোঁজ জেলেদের জন্য বিভিন্ন জায়গার খাটে খোঁজ খবর নিচ্ছি বলে জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ,আর জেলা মৎস কর্মকর্তা বলছেন নিখোঁজ হওয়া জেলেদের খবর কেউ যানায়নি। নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসলে আমরা উদ্ধারে ব্যবস্থা নিবো বলে জানান।
ভোলার দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, নিখোঁজ ১৬ জেলে পরিবার দৌলতখান থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেছেন। তারই আলোকে আমরা নিখোঁজদের সন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
জেলেদের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি দৌলতখান থানায় একটি সাধারন ডায়রি করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। এর আগে  ভোলার চরফ্যাশনের আরো ২টি ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নিখোঁজ জেলেদের ভারতের কোস্টগার্ড উদ্ধার করে বলে জানাযায়।

বাংলাদেশ সময়: ০:৪১:৫৭   ২৭৫ বার পঠিত