বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

খাদ্য পণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধ দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি নয়তো?

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » খাদ্য পণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধ দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি নয়তো?
মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২



করোনা পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য দ্বিগুন থেকে তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। বাইরের থেকে আমদানি করা সামগ্রীর মূল্যও অত্যাধিক বেড়েছে। একইসঙ্গে চাল ডাল মাছ তরি তরকারি সহ নৃত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে যে চাউলের বস্তাটি ছিল ১৬৫০ টাকা ছিল এক সপ্তাহ পরে তার মূল্য হয়ে যায় ১৭৫০ টাকা। অর্থাৎ ২৫ কেজি চাউলের মূল্য যদি সপ্তাহের মধ্যে একশত টাকা বেড়ে যায় তাহলে এর দৌরত্ব কোথায় গিয়ে পৌঁছবে?
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে দেশের শতকরা ৬৮% জন মানুষ খাদ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে সংসার তথা জীবন পরিচালনা দিন থেকে দিনে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বলেছেন দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এটা কিসের পূর্বাভাস? প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে পুড়িয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এমনিতেই দেশের মানুষ বর্তমানে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে চরমভাবে হিমশিম খাচ্ছে । অনেককে খালি পেটে আধপেটে থাকতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলো কেমন হবে তা নিয়ে সকলের মধ্যে এক ধরনের ভয় ভীতি আশঙ্কা কাজ করছে।
সে ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে দেশের সরকার প্রধানের এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। সেক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জন্য সরকার কি কি প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা ¯পষ্ট হওয়া দরকার। কোন দেশে যখন দুর্ভিক্ষ আসে তখন সে দেশের হতদরিদ্র সাধারণ মানুষগুলো দুর্ভিক্ষের যাঁতাকলে  প্রাণ হারায়।
কাজেই দেশের একজন মানুষও যাতে সে ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
একদিকে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে অন্যদিকে একশ্রেণীর মানুষ নানাভাবে লুটপাট করে শত সহস্র কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করছে। সরকারের উচিত স্বচ্ছতা কৃচ্ছতা সাধনের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বনের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। আমাদের দেশের মানুষের জীবন মানে উন্নয়ন ঘটেছে । স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে যদি বাধা সৃষ্টি হয়, মানুষ যদি তার অতি প্রয়োজনীয় প্রয়োজনগুলো মেটাতে না পারে, তখন তাকে নানাভাবে অন্যায়ের পথে পা বাড়াতে হয়। আর দেশের স্বাভাবিকতা তথা অর্থনৈতিক গতি যখন বাধাগ্রস্ত হয়, মন্থর হয় তখনই এ ধরনের নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে প্রধানত দায়িত্ব সরকারের। এক শ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দিনের পর দিন মূল্য বাড়িয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন পণ্যের সিন্ডিকেট বানিয়ে যেভাবে মানুষকে জিম্মি করছে। আর এই সব কিছুর পেছনে রয়েছে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের লোকজন। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
আমরা সরকারের কাছে তড়িৎ পদক্ষেপ কামনা করছি। সাধারণ মানুষকে এই অর্থনৈতিক মন্দা অনাগত দুর্ভিক্ষ এবং নানা ধরনের অর্থনৈতিক শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্ত করে বাজার অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই মানুষ শান্তিতে থাকুক, ক্ষুধা মেটাতে সক্ষম হোক, অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা পাঁচটি মৌল চাহিদা পূরণ হোক, আর সরকার সেটা নিশ্চিত করুক। আজকের দিনে এটাই আমাদের চাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৩:১৩   ৩১৫ বার পঠিত