বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

নানা সমস্যায় জর্জরিত ভোলা সদর হাসপাতাল ॥ প্রয়োজন আশু পদক্ষেপ

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » নানা সমস্যায় জর্জরিত ভোলা সদর হাসপাতাল ॥ প্রয়োজন আশু পদক্ষেপ
রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২



হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ভোলা সদর হাসপাতাল। ভোলা জেলা শহর ও উপজেলা সমূহে এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ক্লিনিকের অভাব নেই। তারপরও সাধারণ মানুষের রোগ বালাইয়ের সময় তাদের প্রধান ভরসার স্থান হল সরকারি হাসপাতাল। ভোলা সদর হাসপাতাল দীর্ঘকাল যাবত জনগণের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। মানুষ অসুস্থ হলে প্রথমেই হাসপাতালে ছুটে যায়। বর্তমানে সিজন পরিবর্তনের কারণে কখনো বৃষ্টি কখনো রোদ গরম ঠান্ডা সবকিছুই কম বেশি আছে। আর এসব কারণে মানুষ নানা ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়া সর্দি জ্বর পেটের পিরা সহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ইদানীং বেড়ে গেছে। শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ২৫ টি  সিট অথচ প্রতিদিন শত শত রোগী সেখানে আসছে। ফলে সেই রোগীদেরকে যথাযথ চিকিৎসা আদৌ সম্ভব হচ্ছে না। ভোলা হাসপাতালে গেলে চারদিকে তাকালে শুধু সমস্যা আর সমস্যাই দেখা যায়। যেখানে একজন রোগী  গেলে জীবনের আশ্বাস পাবে, নিরাময়ের ব্যবস্থা হবে কিন্তু বাস্তবে এখানে তার উল্টোটা হচ্ছে।২৫০ বেড হাসপাতালের নতুন বহুতল  ভবনটি কত বছর কেটে গেল অথচ আজও উদ্বোধন হলো না। ওই ভবন এখন সংস্কারের পর্যায়ে এসে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেতৃবৃন্দের অবহেলার কারণেই ভবনটিকে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। চিকিৎসক, নার্স, আয়া, টেকনোলজিস্ট, সবকিছুতেই রয়েছে সমস্যা আর সমস্যা। রাতের বেলা কোন রোগী নিয়ে গেলে ইমার্জেন্সির ডাক্তার প্রাথমিকভাবে দেখে দেয়।
কিন্তু কেবিনের দায়িত্বে যারা আছেন কেবিন খালি থাকলেও সেই রোগীকে কেবিনে ভর্তি করা সম্ভব হয় না । রোগী যতই অসুস্থ হোক না কেন তাকে ভর্তি করেও কোন বেড অথবা ফ্লোরে থাকার ব্যবস্থা করতেও ব্যর্থ হচ্ছে। রাতের বেলা যদি কোন রোগীর ব্লাড ,ইউরিন পরীক্ষা করার দরকার হয়, তখন দেখা যায় হাসপাতালে ল্যাবরেটরি বন্ধ থাকে। অথচ আশপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের দালালরা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি টেস্টের  জন্য তারা হাসপাতালেই কোথাও না কোথাও রাখে। ক্লিনিকগুলোতে যে নরমাল রেট থাকে তারও কয়েক গুণ বেশি দিয়ে রাতের বেলা রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে  বাধ্য হয়।
হাসপাতালের কিছু স্টাফ রয়েছে যারা বিভিন্ন ক্লিনিক এর সাথে স¤পৃক্ত। তাদের সার্বক্ষণিক ধান্দা থাকে হাসপাতালে আসা রোগীকে কিভাবে ক্লিনিকে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে টু-পাইস কামাই করবে।
এক কথায় হাসপাতালের সামগ্রিক পরিবেশ স্বাভাবিক নয়। নোংরা আবর্জনায় অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে। অন্যদিকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল ঘাটতি। আরেকটি কমন প্রবণতা রয়েছে কোন জটিল রোগ দেখলে অথবা শহরের উল্লেখযোগ্য বা পরিচিত লোক হলে এরা কোনভাবে পত্রপাঠ বিদায় দিয়ে বরিশাল অথবা ঢাকা  পাঠিয়ে দেয়। হার্টের রোগী  চিকিৎসার জন্য ডাক্তার থাকলেও বেশিরভাগ রোগীকেই তারা অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়।এক কথায় ভোলা সদর হাসপাতাল নিয়ে অনেক লেখালেখি অনেক আলোচনা সমালোচনার পরেও এর পরিবেশ কিংবা চিকিৎসার মানগত কোন পরিবর্তন হয়নি।
স্বাস্থ্য প্রতিটি জনগণের মৌলিক অধিকার। সরকার এই খাতে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে।
বাজেটের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সেই টাকার সিংহভাগ অপচয় হয়, লুটপাট হয়। আমরা চাই যেই টাকা বরাদ্দ হয় সে টাকার মধ্যেই জনগণের স্বাস্থ্যসেবার একটি ন্যূনতম পরিবেশ যেন বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে সৃষ্টি হয়। একটি ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায় যদি চার-পাঁচ বছর পরে থাকে, তাহলে সেখানে কোন প্রশাসন অথবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ সৃষ্টি হয়। ভোলা সদর হাসপাতালের পরিবেশকে রোগীর নিরাপদ নিরাময় উপযোগী করা হোক। নতুন বহুতল বিশিষ্ট ভবনটি অতিসত্বর উদ্বোধন করে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার করা হোক। ডাক্তার নার্স সহ প্রয়োজনীয় স্টাফ নিয়োগ সহ সরকারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হোক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধপত্র ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। বিশেষ করে বর্তমান নিউমোনিয়া সর্দি কাশ জনিত রোগ ডায়রিয়া ইত্যাদি সংক্রামক রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষ ভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৬:৪১   ৪০৫ বার পঠিত