বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

একজন মোশারফ হোসেন শাজাহান যেন ভুলে না যাই

প্রচ্ছদ » মুক্তমঞ্চ » একজন মোশারফ হোসেন শাজাহান যেন ভুলে না যাই
সোমবার, ৯ মে ২০২২



॥ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন ॥

দ্বীপজেলা ভোলার গণমানুষের প্রিয় নেতা ছিলেন মোশারফ হোসেন শাজাহান। দল-মত নির্বিশেষে ব্যক্তি মোশারফ হোসেন শাজাহানকে ভোলার সকল মানুষ ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। সেই ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৯ সালে তার জন্ম। পিতা ভোলা শহরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় সম্মানিত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলতাজের রহমান তালুকদার, মাতা মাসুমা খানম চৌধুরানী। ভোলা শহরের সকল মানুষের ভালোবাসা ও ¯েœহ নিয়ে এই শহরে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জড়িয়ে পড়েন। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। কিশোর বয়সে বিভিন্ন নাটকে শুধু অভিনয় নয় এক সময় নিজেই লেখালেখি শুরু করেন। ছাত্র অবস্থায় ছোট গল্প সংকলন ঝরা পালক এর গান এবং নাটক নীড় ভাঙ্গা ঝড় লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। ভোলা সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএ ও গ্রাজুয়েশন নিয়ে তিনি এলএলবি পাস করেও আইন প্যাকটিস করেননি।

---

তার ভেতরে ছিল নানামুখী প্রতিভা। তিনি লিখতেন, অভিনয় করতেন, আবৃত্তি করতেন, সংগীত, মানবসেবা, সমাজসেবা, রাজনীতি সকল ক্ষেত্রেই তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৬৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৭০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপিএ এবং পরবর্তীকালে বিএনপি থেকে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ চারবারসহ মোট ৬বার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় তিনি প্রথমে জাগোদল পরবর্তীতে বিএনপি’র ভোলা জেলার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ে তিনি উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বৃহত্তর বরিশাল জেলার জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী (ডিডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ সাল এবং ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দুটি মন্ত্রিসভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ্যতার সঙ্গে ১০ বছর মন্ত্রিত্ব করেছেন।
১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন এসডিও একেএম নাসির উদ্দিন সাহেবের সহযোগিতায় ভোলার প্রথম পত্রিকা “পাক্ষিক মেঘনা” সম্পাদনা করেন। ওই সময় তিনি প্রথম উদ্যোগ নিয়ে তাদের নিজস্ব ভবনে “ভোলা প্রেস ক্লাব” প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ভোলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। গণমানুষের কল্যাণে জীবনমানের উন্নতি করা ছিল তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৮১ সালে মানবকল্যাণে পদযাত্রার মাধ্যমে সমাজ সংস্কার ও মানব কল্যাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানব কল্যাণে বন্ধুজন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তিনি বন্ধুজন পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভোলায় সার্বজনীন গণশিক্ষা তথা সাক্ষরতা অভিযানের সফল হন। তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভোলার মানুষকে বিভিন্ন কর্মে উদ্দীপনা যোগান। ২০০১ সালের মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কুঁড়েঘর মুক্ত ভোলা আন্দোলনে সফল হন। তিনি একটি নাটক, একটি ছোট গল্পের সংকলন ছাড়াও দশটির বেশি উপন্যাস ও মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তিনি আজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। একজন নিরহংকার, বন্ধুবৎসল, আন্তরিক, নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে তিনি সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য ব্যক্তি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ২০১২ সালের ৫ মে তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার স্ত্রী প্রফেসর ফিরোজা বেগম, পুত্র আসিফ আলতাফ, তিন কন্যা নীলা শ্বেতা ও বিনা দুই ভাই আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর ও গোলাম কিবরিয়া জাহাঙ্গীরসহ অগণিত ভক্ত অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
আজকের দিনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মরহুম মোশারফ হোসেন শাজাহানের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৯:৫০   ৬৭৯ বার পঠিত